Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

japan-bangladeshসরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বাংলাদেশে বড় আকারে বিনিয়োগ নিয়ে আসছে জাপান। সড়ক, মেট্রো রেলসহ মোট ছয়টি প্রকল্পে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে দেশটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দেশটির কাজামা করপোরেশন, নিপ্পন, ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি কম্পানির প্রতিনিধি এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গেও বৈঠক করছে সফররত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

আগামী মার্চে ‘জাপান-বাংলাদেশ জয়েন্ট প্লাটফর্ম’ সভায় অংশ নিতে দেশটির সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। যেখানে প্রকল্পগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। পিপিপি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে। পিপিপি কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলকামা সিদ্দিকী বলেন, ‘জাপান বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু। বাংলাদেশের বড় বড় অবকাঠামোতে দেশটির অবদান রয়েছে। পিপিপিতেও দেশটি অর্থায়ন করতে আগ্রহী। আগামী মার্চে যৌথ সভায় প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’

chardike-ad

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, সরকারি পর্যায়ে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল, কাঁচপুর, দাউদকান্দি সেতুসহ প্রায় ৪০টির মতো প্রকল্প এখন চলমান আছে জাপানের অর্থায়নে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান ৭৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আলাদা দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে যাচ্ছে জাপান। আড়াইহাজারে এরই মধ্যে দেশটির জন্য এক হাজার একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সরকারি পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের পর এবার পিপিপিতেও বড় আকারে বিনিয়োগ নিয়ে আসছে জাপান।

পিপিপি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর যানজট নিরসনে সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় যে পাঁচটি মেট্রো রেল নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছিল, তার সবকটিই বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে জাপানের। এর মধ্যে মেট্রো রেলের রুট-৬ এর (উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত) কাজ এখন চলমান। পিপিপির মাধ্যমে যে ছয়টি প্রকল্পে বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে জাপান এর মধ্যে একটি হলো আশুলিয়া থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-২ (এমআরটি-২) প্রকল্প। জাপানের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে এরই মধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে ডিটিসিএ। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য মতে, মেট্রো রেল-২ এর রুট নির্ধারণ করা হয়েছে, আশুলিয়া থেকে শুরু হয়ে সাভার, গাবতলী, নিউ মার্কেট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গুলিস্তান হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত। মেট্রো রেলটির দৈর্ঘ্য হবে ৪০ কিলোমিটার। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ডিটিসিএ তথ্য বলছে, দৈনিক এ রুটে ১১ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই রুটে প্রতি ট্রিপে প্রায় ২৫ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারে।

মেট্রো রেল-২ ছাড়া আরো যে পাঁচটি প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে জাপান তার একটি হলো আউটার রিং রোড। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো হেমায়েতপুর থেকে কালাকান্দি, মদনপুর, দাংগা, বাইপাইল, গাজীপুর হয়ে আবার হেমায়েতপুরে গিয়ে সড়কটি শেষ হবে। সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় এই প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩০ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। আউটার রিং সড়কটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ হলে ঢাকার ভেতরে থাকা বাস টার্মিনালগুলোকে বাইরে রিং রোডের কাছাকাছি স্থানান্তর করা যাবে। এ ক্ষেত্রে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালীর পরিবর্তে ঢাকার চারপাশে ছয়টি নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। এতে ঢাকার ভেতর দিয়ে দূরপাল্লার বাস চলাচল কমবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলো চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর মে মাসে কক্সবাজার গিয়ে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেন। এরই মধ্যে প্রকল্পটির ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি। এই প্রকল্পেও অর্থায়নে সম্মত হয়েছে জাপান। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। জাপানের মারুবিনি কম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। সরকারও জাপানের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাজি হয়েছে। অর্থায়নে সম্মত হওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো ঢাকার পাশে গাজীপুরের ধীরাশ্রম রেলস্টেশনের পাশে একটি কনটেইনার ডিপো স্থাপন, কমলাপুর রেলস্টেশনে একটি মাল্টিমডেল হাব নির্মাণ এবং ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে একটি মাল্টিমডেল হাব নির্মাণ প্রকল্প। এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে একজন যাত্রী সহজে রেলস্টেশনে নেমে তার গন্তব্যে যেতে পারবে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া।

পিপিপি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোক্তাদের সহজ অর্থায়নে ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে পিপিপি কার্যালয়ের সঙ্গে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতেই এই সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। বিদেশিদের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকারীরাও যাতে পিপিপিতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়, সে জন্য ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে পিপিপি অফিস। পিপিপিতে চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ অবকাঠামো অর্থায়ন তহবিল লিমিটেড (বিআইএফএফএল), ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট, সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল, ঢাকা ব্যাংক, গ্রিন ডেল্টা ক্যাপিটাল, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ইডকল, আইআইডিএফসি, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, রিভারস্টোন ক্যাপিটাল, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড।

সৌজন্যে- কালের কণ্ঠ