২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। সরকারি এ হাসপাতাল নগরের আন্দরকিল্লা এলাকায়। এটি সদর হাসপাতাল নামেও পরিচিত। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টা ১৩ মিনিটে হাসপাতালের ১১ নম্বর শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে ঢুকতেই দেখা যায়, কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষটি তালাবদ্ধ। কর্তব্যরত নার্সের রুমের সামনে এক নারী বসে আছেন। ওয়ার্ডের শয্যাগুলোতে রয়েছে শিশু রোগী। চিকিৎসক ওয়ার্ডে আছেন কি না জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, ‘সকালে ডাক্তার থাকেন। দুুপুর ২টার পর থেকে এখন ডাক্তার পাবেন না।
১০ নম্বর মেডিসিন ও কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে গেলে সেখানেও অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি দেখা যায়। এর মধ্যে কার্ডিওলজিতে ৯ জন রোগী রয়েছে। ওয়ার্ডটিতে চারজন নার্স দেখা গেলেও রোগীর পাশে কোনো ডাক্তার দেখা যায়নি। এ সময় নার্সরা বলেন, ‘স্যার (চিকিৎসক) ডিউটি রুমে আছেন। পরে চিকিৎসকের কক্ষে গেলে সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. কাজী মুহাম্মদ আশিক আমানকে দেখা যায়। তাঁর ডিউটি ছিল সকালের শিফটে।’ ওয়ার্ডে চিকিৎসক না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. কাজী মুহাম্মদ আশিক আমান বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে চিকিৎসকের সংকট চলছে। আমরা সকালের শিফটে ছিলাম। এ শিফটে (বিকেল) ইনডোরের ডাক্তার নেই। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এখানে রোগী দেখবেন। আমি নির্ধারিত সময়ের বাইরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি।’
এরপর হাসপাতালের মূল ভবনে সব ওয়ার্ড ঘুরে একজন চিকিৎসকের নাগাল পাওয়া যায়নি। শুধু চিকিৎসক নয়, হাসপাতালের ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রেসহ সব চিকিৎসা যন্ত্রপাতির কক্ষ বন্ধ। অপারেশন থিয়েটারও তালাবদ্ধ।
গতকাল সরেজমিন বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালের সব ওয়ার্ড, কেবিন ও জরুরি বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, রোগী রয়েছে অনেক। কিন্তু জরুরি বিভাগে একজন মেডিক্যাল অফিসার ছাড়া দ্বিতীয় কোনো চিকিৎসক নেই।
দ্বিতীয় তলায় ৩টা ৪৮ মিনিটের সময় দেখা যায়, অপারেশন থিয়েটার বন্ধ। গেটে তালা। গাইনি ওয়ার্ডে ৪৩ জন রোগী রয়েছে বলে এক সেবিকা জানান। চারজন নার্সকে দেখা গেলেও চিকিৎসক কোথায় জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘এখন এখানে স্যারদের পাবেন না। আমরা প্রয়োজনে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের কল দিয়ে থাকি।’
এ সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ও তাদের স্বজনদের কথা বললে নাম প্রকাশ না করে সবাই বলে, সকাল ১০-১১টার দিকে চিকিৎসক রাউন্ড দিতে আসেন ওয়ার্ডে। এরপর মাঝেমধ্যে দুপুর ১টার দিকেও আসেন। দুপুর ২টার পর থেকে সকাল ৮টার আগ পর্যন্ত ওয়ার্ডে চিকিৎসক দেখা যায় না। এ সময় কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। সেই সঙ্গে অস্ত্রোপচারও বন্ধ থাকে।
সর্বশেষ জরুরি বিভাগে গেলে দেখা যায়, তিনজন নার্স (পুরুষ) রয়েছেন। চিকিৎসক আছেন কি না জানতে চাইলে এক কর্মচারী বিশ্রামাগার থেকে এক নারী চিকিৎসককে ডেকে আনেন। মেডিক্যাল অফিসার রুপা দত্ত বলেন, ‘আমাদের আগে ইনডোর দেখতে হতো না। মেডিক্যাল অফিসার সংকটের কারণে কয়েক মাস ধরে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসককে বিকেলে ও রাত্রিকালীন (দুই শিফটে) ইনডোরে রোগী দেখতে হয়। আজকে এ শিফটে (বিকেল) আমি কর্তব্যরত। জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে পুরো হাসপাতালে আমাকেই রোগী দেখতে হবে।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, চিকিৎসকদের সংকট সামনে আরো বাড়তে পারে। কারণ হাসপাতালে ১০টি ওয়ার্ড আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে যদি সার্বক্ষণিক চিকিৎসক রাখতে হয় তাহলে ৪০ জন মেডিক্যাল অফিসার লাগবে। কিন্তু জরুরি ওয়ার্ডে আছেন ছয়জন। আউটডোরে আছেন পাঁচজন। চিকিৎসক সংকটের কারণেই জরুরি বিভাগ থেকে মাঝেমধ্যে ইনডোরের চিকিৎসাসেবা দিতে হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও উপজেলাগুলো থেকে আগে সংযুক্ত হিসেবে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ছিলেন। এখন তা না থাকার কারণেই দুই শিফটে চিকিৎসক সংকট প্রকট। তবে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে কেউ হাসপাতাল থেকে যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি এ হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কসহ ৪৯ জন চিকিৎসক রয়েছেন। এর মধ্যে জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট ২৩ জন, মেডিক্যাল অফিসার ১১ জন (জরুরি বিভাগ ও আউটডোর), সহকারী রেজিস্ট্রার পাঁচজন ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার একজন। এর বাইরে সংযুক্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঁচজন ও উপজেলা হাসপাতালগুলো থেকে তিনজন চিকিৎসক রয়েছেন।
সৌজন্যে- কালের কণ্ঠ