পরিবারের স্বচ্ছলতাসহ সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে নিজ মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কাটাতে হয় প্রবাসজীবন। হয়তো একেই বলে এক ধরনের দেয়ালবিহীন কারাগার। প্রবাসে সবাই ব্যস্ত যে যার কাজে। সবার একই চিন্তা কীভাবে বেশি উপার্জন করা যায়। মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী-সন্তানদের মান অভিমান পূরণ করতে গিয়ে তারা ভুলে যান নিজের শখ।
‘দীর্ঘ প্রবাস জীবনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু লিখছি। হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেন পরবাসে আমার মতো দুখী আর কেউ নেই। ভাবাই স্বাভাবিক, সত্যিই আমি দুখী পরবাসী। বলতে পারেন কষ্টবিলাসী। দেশে সবাই থাকার পরও প্রবাসে আমি একা বড়ই একাকিত্ব। হায়রে! জীবন।’
প্রবাসে কেউ কারো নয়, নিজেই নিজের আপন। প্রবাসীদের সব থেকে বড় সমস্যা হলো একাকিত্ব, আর এ কারণেই অনেক সময় অনেক ছোট সমস্যাগুলোও অনেক বেশি অস্থির ও যন্ত্রণা দেয়। আর প্রবাসীদের তার আপনজন বা প্রিয়জন কষ্ট দিলে সেটা সহ্য করার ক্ষমতা সে হারিয়ে ফেলে। অনেকে একাকিত্বের কারণে আত্মহত্যাও করে। প্রবাসীরা তাদের আপনজন কত ভালবাসে সেটা শুধু সে নিজেই জানে।
প্রবাসীরা দুঃখ বিলাসী হবার কোনো অবকাশ নেই কারণ আমরা তো একটু সুখের আশায় পাড়ি দিয়েছি অজানার দেশে। আমাদের দুটি চোখ এক চিলতে সুখ দেখার জন্য অপলকে চেয়ে আছে দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর। দুঃখ নিয়ে বিলাসীতা করার সুযোগ আমাদের নেই।
দুঃখ নিবারণ করার ইচ্ছা নিয়ে মা মাটি ছেড়ে অজানা অচেনা এক দেশের মাটিতে আশার ঘর বেঁধেছি, আমরা দুঃখ বিলাসী নই, আমরা সুখের কাঙাল। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সুখ খুঁজে বেড়াই। ঘুরে বেড়াই পরদেশের এপার-ওপার। কতকিছুই না করি সবকিছু তো লিখে বোঝানো সম্ভব নয়, অনুভবে আমাদের কষ্ট বোঝা যাবে।
দুঃখ বিলাসী ওরাই হয় যাদের জীবনে সুখের ছোঁয়া লাগে, যাদের জীবনে সুখ শান্তির নেই কোনো অন্ত নেই কোনো অভাব। ‘আমি তাদের কেউ নই, আমি এতটুকু সুখ সন্ধানী একজন খেটে খাওয়া মানুষ আমার জীবনে সুখের ছোঁয়া লাগেনি। প্রবাসী নিঃসঙ্গ জীবনে সুখ আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। সুখ খুঁজতে গিয়ে অবশিষ্ট সুখটুকু আমি হারিয়ে ফেলেছি।’
হাজারে একজনের ভাগ্যে যদি সুখ থাকে ৯৯৯ জন বুকভরা হাহাকার নিয়ে এই প্রবাসে ধুকে ধুকে মরছে, আমি ৯৯৯ জনের একজন তাই আমি আমার কথা বলবো ৯৯৯ জনের কথা বলবো। দু’একজনের সুখের কাহিনি নাইবা শুনলেন। আমাদের কথা শুনুন এবং জেনে রাখুন যারা প্রতিদিন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার লড়াই করে, যারা সুখের তরে সুখ হারায় ওদের কথা জেনে রাখা খুবই জরুরি কারণ ওদের ত্যাগ তিতিক্ষার ফসল হলো দেশবাসী আপনজনের মুখের নির্মল হাসি।
সত্যি কথা বলতে কি, প্রবাসীর কষ্ট প্রবাসী ছাড়া আর কেউ বোঝে না। অনুমান করে সব কষ্ট বোঝা যায় না। অনুমান করে যদি প্রবাসীদের কষ্ট বোঝা যেত তাহলে এই লেখার প্রয়োজন হত না। আমি এসব কেন লিখছি? কেন প্রবাসীদের প্রতি আমার এই দুর্বলতা? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো আমি তাদের একজন।
প্রবাসীরা ভালো থাকুক। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সেই আমাদের অর্থনীতির চাকা হয় বেগবান। আমরা সমৃদ্ধির পথে এগোচ্ছি। সম্মান করা উচিত সব প্রবাসী ভাইদের। আর কোনো প্রবাসী ভাই যেন দুঃশ্চিন্তা করে বিদেশের মাটিতে প্রাণ না হারায় সেই কামনা। ভালো থাকুক প্রবাসীরা।
লেখক- মো. মুখলেছুর রহমান, সৌজন্যে- জাগো নিউজ