সুন্দরবন অঞ্চলে এবার এক নারীর জালে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত স্যাটেলাইট অ্যান্টেনাযুক্ত বিরল প্রজাতির (বাটাগুর বাসকা) একটি কচ্ছপ ধরা পড়েছে। সম্প্রতি ওই কচ্ছপটি ভারতীয় জলসীমায় বিচরণ করে বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে ফিরে আসে। সুন্দরবন ঘেঁষা সুতারখালী নদীতে বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) ওই কচ্ছপটি ধরা পড়ে বলে শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি।
বাটাগুর বাসকা প্রকল্পের করমজল স্টেশন ম্যানেজার আব্দুর রব জানান, জেলের জালে আটকা পড়া স্যাটেলাইট অ্যান্টেনাযুক্ত বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপটিকে শুক্রবার কলবগী স্টেশন থেকে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে এনে রাখা হয়েছে। এর আগে সোমবার উদ্ধার হওয়া অন্য কচ্ছপটিকেও ওই পুকুরে রাখা হয়।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক আবু সালেহ জানান, সুতারখালী নদীর এক প্রান্তে সুন্দরবন অপর প্রান্তে লোকালয়। খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার কালবগী গ্রামের আব্দুল মান্নানের স্ত্রী কুলসুম বেগম বুধবার ওই নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন। জাল টেনে তুলতেই উঠে আসে স্যাটেলাইট অ্যান্টেনাযুক্ত বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপটি। বিশেষ প্রযুক্তিযুক্ত কচ্ছপ দেখে দরিদ্র ওই নারী জেলে ভয়ে চিৎকার করতে থাকেন। এসময় স্থানীয় লোকজন সেখানে জড়ো হয়। খবর পেয়ে সুন্দরবনের কলাবগী স্টেশনের কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে কচ্ছপটি উদ্ধার করে স্টেশনে নিয়ে আসে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, গত সোমবার বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলাধীন মিঠাখালী এলাকার পুটিমারী খালে এক বাকপ্রতিবন্ধীর জেলের জালে অন্য কচ্ছপটি ধরা পড়ে। কচ্ছপটি দুই দফা হাত বদলের পর বাজারে বিক্রি করার সময় ক্রেতার হাত থেকে বন বিভাগ উদ্ধার করে। কচ্ছপ দুটির বয়স প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ বছর। ওজন সাড়ে সোয়া ১০ কেজি থেকে সাড়ে ১২ কেজির মধ্যে।
প্রসঙ্গত, বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই অবস্থায় ওই প্রজাতির কচ্ছপের বিচরণ এবং প্রজননক্ষেত্র জানতে শুরু করা হয় গবেষণা।
সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, প্রায় এক মাস আগে গবেষণায় যুক্ত বাটাগুর বাসকা প্রজাতির একটি কচ্ছপ বরিশাল এলাকায় মারা পড়েছে। আর কিছুদিন আগে অপর একটি কচ্ছপ ভারতীয় জলসীমায় বিচরণ করার পর আবার সুন্দরবনে ফিরে আসে। সোমবার এবং বুধবার জেলেদের জালে ধড়া পড়ে দু’টি কচ্ছপ। বর্তমানে চারটি কচ্ছপ জীবিত আছে। কচ্ছপের পিঠে স্থাপন করা স্যাটেলাইট অ্যান্টেনার মাধ্যমে এই তথ্য জানা গেছে বলে বন বিভাগ জানিয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবিরের দেয়া তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে ২১ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়। সমুদ্রে পাঁচ প্রজাতির কচ্ছপের বাস। সারা বিশ্বে ৩০০ প্রজাতির কচ্ছপ আছে। প্রকার ভেদে একটি কচ্ছপের গড় আয়ু ২০০ থেকে প্রায় ৩০০ বছর।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগে একসময় প্রচুর পরিমাণ বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমানে ওই প্রজাতির কচ্ছপের দেখা মেলে না। এই অবস্থায় সুন্দরবনে এই প্রজাতির কচ্ছপের সংখ্যা বাড়নোর চেষ্টার পাশাপাশি গবেষণার কাজ চলছে।