সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অন্তত ১২ সদস্য নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় সেনাসদস্যের প্রাণহানি ও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সিরিয়ায় হামলা অব্যাহত রাখার হুমকির জবাব কড়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।
যারাই ইসরায়েলের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। অন্যদিকে যুদ্ধের জন্য ইরান প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ইরানের বিমানবাহিনী প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, রবিবার ইসরায়েলি হামলায় মোট ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ নেতৃত্বাধীন সরকারের নিরাপত্তাবাহিনীর ৬ সদস্য এবং ১৫ জন অন্য দেশের নাগরিক রয়েছেন। অ-সিরীয় ১৫ জনের মধ্যে ১২ জন ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদস্য।
রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানি লক্ষ্যবস্তুগুলোতে টানা বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। গোলান হাইটসে ইরানের ছোড়া মিসাইলের জবাবে এই হামলা।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলি তিনটি যুদ্ধবিমান থেকে সিরীয় স্থাপনায় ওই হামলা হয়েছে। সোমবার সিরিয়ার ভেতরে ইরানি এবং সিরিয়ার সামরিক বাহিনী, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও কুদস ফোর্সের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান।
ব্রিটিশ এই মানবাধিকার সংস্থা বলছে, দামেস্ক বিমানবন্দরের কাছে কুদস ফোর্সের অস্ত্রাগার, ইরানের গোয়েন্দা বাহিনীর স্থাপনা এবং ইরানের সামরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রোনেন ম্যানেলিস বলেছেন, ‘একদিন আগে গোলান মালভূমি লক্ষ্য করে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের জবাবে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের মাধ্যমে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে।
সিরিয়ান স্থাপনায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পাশাপাশি ইরানি হামলার জবাবে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে বিরল ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইরান এবং সিরীয় বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার দেশ হামলা অব্যাহত রাখবে।
একই সঙ্গে সিরিয়ায় ইরানের প্রবেশকে ইসরায়েল মেনে নেবে না বলে দীর্ঘদিনের দাবি পুনরায় ব্যক্ত করেছেন তিনি। এদিকে, মঙ্গলবার ইরানের সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অ্যাডমিরাল আলী শামখানি ইসরায়েলকে কড়া জবাব দেয়ার হুমকি দিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সিরিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করবে ইরান। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর হুমকি পরোয়া করে না তেহরান।
ইরানের জ্যেষ্ঠ এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটনের জন্য সিরিয়ার সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা জরুরি। ভালো প্রতিবেশী হওয়াই আমাদের মূলনীতি। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা সঙ্কট মোকাবেলার জন্য প্রতিবেশীদের মাঝে একটি ভালো আলোচনা জরুরি।’
সূত্র- জেরুজালেম পোস্ট, সৌজন্যে- কালের কণ্ঠ