বাসী সব শ্রমিককে বাধ্যতামূলকভাবে শতভাগ বীমার আওতায় আনবে বিদেশি বীমা কোম্পানিগুলো। এ জন্য বিদেশি বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় সফরে যাচ্ছেন আইডিআরএ ও আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা। আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অজিত কুমার পাল এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আইডিআরএ (বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ) ও আর্থিকপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা শিগগির মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সফর করবেন। প্রায় ৮০ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকেন। প্রবাসী শ্রমিকরা সেখানকার বীমা কোম্পানিগুলোতে জীবন ও সাধারণ বীমা করতে পারলে অনেক সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে বিদেশে মারা যাওয়া শ্রমিকদের দেশে নিয়ে আসতে সহজ হবে। এখন বিদেশে মারা যাওয়া শ্রমিকদের দেহ দেশে আনতে খুব ঝামেলায় পড়তে হয়।
‘প্রবাসী শ্রমিকদের শতভাগ বীমার আওতায় আনার বিষয়টি এখন দেখছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আশা করি, বিষয়টির একটা সমাধান হবে। আমরা এখন মধ্যমআয়ের দেশের দিকে এগোচ্ছি, এ অবস্থায় সবাইকে বীমার আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া কোনও উপায় নেই’,- বলেন তিনি।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভাগ্য ফেরানোর আশায় বিদেশে যাওয়া শ্রমিকের অনেকেই ফেরেন লাশ হয়ে। অনেকে আবার কোম্পানি বন্ধ বা লে-অফ হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে চাকরি হারান। এতে অসহায় হয়ে পড়ে তাদের পরিবার। শূন্য হাতে ফিরে আসতে হয় প্রবাসী কর্মীদের। এসব বিবেচনায় প্রবাসী সব শ্রমিককে বাধ্যতামূলকভাবে শতভাগ বীমার আওতায় আনতে একটা নীতিমালা হচ্ছে। তিন ধরনের বীমার বিধান রেখে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে আইডিআরএ।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশ যাত্রার সময় থেকে পরবর্তী এক মাসের জন্য কর্মীরা পাবেন স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা। চাকরি হারানো, বাফার টাইম, লে-অফ বা কোম্পানি বন্ধের জন্য পাবেন বীমা সুবিধা। এ ছাড়া প্রবাসে কর্মকালীন সময়ের জন্য পাবেন জীবনবীমা সুবিধা।
আইডিআরএ’র সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে প্রবাসী কর্মীদের শতভাগ বীমা সুবিধার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদেশ যাওয়ার সময় থেকে শুরু করে প্রবাসীদের কর্মকালীন সময় পর্যন্ত তিন ধরনের বীমা সুবিধা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব বীমা সুবিধা কার্যকর হলে প্রবাসী কর্মীরা অনেক দিক থেকে ঝুঁকিমুক্ত হবেন।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, প্রবাসীরা প্রাথমিকভাবে তাদের কর্মমেয়াদের জন্য জীবনবীমা পলিসি ক্রয় করতে পারবেন। জীবনবীমার অঙ্ক দুই লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনো প্রবাসী শ্রমিক এই বীমা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। বীমা চলাকালীন বীমা গ্রহীতার মৃত্যু অথবা অঙ্গহানি হলে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে। মৃত্যুর ক্ষেত্রে শতভাগ বীমা দাবি পরিশোধযোগ্য। চাকরি হারানো, কোম্পানি লে-অফ বা বন্ধের জন্য সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকার বীমা সুবিধা পাওয়া যাবে। বীমার মেয়াদ হবে এক বছর। তবে এনডোর্সমেন্টের মাধ্যমে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো যাবে। যদি বীমা গ্রহীতা কর্মে নিয়োগের এক মাসের মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত হন তবে ক্ষতিপূরণ হবে বীমা অঙ্কের ৮০ শতাংশ, তিন মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে বীমা অঙ্কের ৭০ শতাংশ, পাঁচ মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে ৬০ শতাংশ, ৭ মাসের মধ্যে ৫০ শতাংশ, ৭ মাস থেকে ৯ মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে ৪০ শতাংশ এবং ৯ মাসের অধিক সময়ের মধ্যে চাকরিচ্যুত হলে ক্ষতিপূরণ হবে বীমা অঙ্কের ২৫ শতাংশ।
তবে নিজ ইচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিলে, অদক্ষতা, শারীরিক অক্ষমতা বা স্বাস্থ্যগত কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি পেলে এবং বীমা গ্রহীতা নিজের অসদাচারণ-অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে চাকরিচ্যুত হলে, নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে বা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে বীমার ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না। বিদেশে কর্মরত এবং বিদেশে কাজ করতে যাবে এমন দক্ষ, অদক্ষ ও সেমি দক্ষ শ্রেণির শ্রমিকরা এই বীমা সুবিধা পাবেন। তবে যারা ফ্রি ভিসায় বিদেশে যাবেন, তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবীমা ব্যতীত অন্য কোনো বীমা সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। বিদেশ যাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর হতে এ সংক্রান্ত ছাড়পত্র সংগ্রহের আগেই এককালীন প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে।
এর আগে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বীমা অনুমোদনের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে ওই সময় প্রক্রিয়াগত জটিলতাসহ বেশকিছু কারণে সেই উদ্যোগ আটকে যায়।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ