শিক্ষককে ‘গালাগাল করা হয়েছে ’ অভিযোগ তুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইকবাল কবীর জাহিদকে ফোনে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বিপুল। আর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফেরা হবে না।
শনিবার দুপুরে হুমকিদাতার বিচার দাবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন শেষে ক্লাস বর্জনের এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল কবীর জাহিদকে হুমকিদাতার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি। শিক্ষকরা ক্লাসে যাবে না।’
বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধনে শিক্ষকরা জানান, গত ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল মোবাইল ফোনে অধ্যাপক ইকবাল কবীর জাহিদকে অকথ্য ভাষা গালিগালাজ করেন। এসময় তিনি ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকিও দেন।
শিক্ষকদের মানববন্ধন চলাকালেই শেখ হাসিনা হল ছাত্রলীগের সাধারণ হুমাইয়ারা আজমীরা এরিনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে। তারা শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে।
হুমাইয়ারা আজমীরা এরিনের দাবি, ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অধ্যাপক ইকবাল কবীর জাহিদ।
ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, ‘আনোয়ার হোসেন বিপুল নামে এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফোনে আমাকে অকথ্য ভাষা হুমকি দিয়েছেন। তিনি আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এর একদিন পরেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। শহর থেকে ওহি নাজিল করে, আমার ছাত্রদের আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়েছে।’
‘যে নৌকা পোড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, সেটি সঠিক নয়। নৌকা বাতাসে পড়ে যেতে পারে। র্যাগিংবিরোধী বিলবোর্ড টানানোতে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে।’
কেন হুমকি দেওয়া হলো- জানতে চাইলে অধ্যাপক ইকবাল কবীর জাহিদ, ‘টেন্ডারের মাধ্যমে শহীদ মশিয়ুর রহমান হলে নিন্মমানের চেয়ার টেবিল সরবরাহ করা হয়েছে। বিলে আমি আপত্তি করেছি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘একজন ছাত্রলীগ নেত্রীর নেতৃত্বে আজ যা ঘটেছে সেটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তির পরই বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত করা হয়। এবার করা হয়েছে। শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করা হবে, এটা হতে পারে না।’
‘তারা অভিযোগ করছে, নৌকা ভেঙে ফেলা বা পোড়ানো হয়েছে। তাদের এই অভিযোগ সঠিক নয়। তাছাড়া নৌকা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক। নির্বাচনের পর সেগুলো তো সরিয়ে নেওয়ার কথা। তারা যদি সত্যিকারের নৌকার সৈনিক হয়, তাহলে তাদেরই সরিয়ে ফেলা উচিত ছিল। আমি নিজে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদকে বলেছি নৌকার পোস্টার, বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলতে। তিনি বলেছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটা নিয়ে তো ইস্যু করার দরকার নেই।’
শিক্ষকদেরকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন উপাচার্য। বলেন, ‘আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় চালু থাকবে। আমি শিক্ষকদের সঙ্গে বসব। তারা ক্লাসে ফিরে যাবে, এটা আমার বিশ্বাস।’