বরিশালের মুলাদী উপজেলায় নিখোঁজের ১৩ দিন পরে গিয়াস উদ্দিন নামে এক যুবকের লাশ চরের কাশবন থেকে গত সোমবার উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত গিয়াস উদ্দিন মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের সাহেবরামপুর গ্রামের লাল মিয়া সরদারের ছেলে। তিনি কোরিয়া গমনের আগে গত ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে স্ত্রী-সন্তানদের বাড়িতে রেখে যাওয়ার জন্য মুলাদীতে আসেন।
নিহতের চাচা ধলু সরদার বলেন, গিয়াস উদ্দীন প্রায় ৩ বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিরে এলাকায় তার শ্বশুর কাওসার হামিদ প্রতিষ্ঠিত মার্ভেলাস মাল্টিপারপাস সোসাইটিতে কাজ শুরু করে। কিছুদিন আগে মাল্টিপারপাস সোসাইটির চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করে। সেই সঙ্গে পুনরায় দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। নিহতের স্ত্রী রিমা বেগম জানান, তার স্বামী পুনরায় কোরিয়া যাওয়ার জন্য প্রসেসিংও সম্পন্ন হয়েছে। খুব শিগগিরই তার কোরিয়া চলে যাওয়ার কথা ছিল।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় কৃষকরা নদীর চরের মধ্যে একটি কাশবনে লাশ দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে জানায়। পরে সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
পুলিশের ধারণা, ওই যুবককে হত্যা করে লাশ চরে ফেলে রাখা হয়েছে। মাল্টিপারপাস ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে হত্যা করা হতে পারে। ব্যবসা নিয়ে শ্বশুর কাওসারের সাথেও তার বিরোধ চলে আসছিল।
স্বজনরা জানায়, গিয়াস উদ্দিন দীর্ঘদিন কোরিয়ায় ছিলেন। সেখান থেকে ফিরে মুলাদীতে শ্বশুরের সাথে তিনি মাল্টিপারপাসের ব্যবসা করতেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে ঢাকায় গিয়ে চাকরি শুরু করেন গিয়াস উদ্দিন।
বরিশালের মুলাদী উপজেলায় গিয়াস উদ্দিনকে (৩০) অপহরণের ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ। এমন অভিযোগ ছিল নিহতের স্বজনদের। ২৫ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে দুর্বৃত্তরা গিয়াস উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায়। তার স্ত্রী মুলাদী থানায় অপহরণের মামলা দিতে গেলে নেয়নি পুলিশ। ১০ দিন পর একটি জিডি নেয়া হয়। তবে গিয়াস উদ্দীনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা নিয়েছে পুলিশ। নিহতের স্বজনরা বলেন, গিয়াস উদ্দিনকে অপহরণের পর পুলিশ যদি মামলা নিয়ে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করতো তাহলে হয়তো হত্যার শিকার হতো না।
মঙ্গলবার দুপুরে নিহত গিয়াসের চাচা ধলু সরদার বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পাঁচজনসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মুলাদী থানায় হত্যা মামলা করেন।
মুলাদী থানা পুলিশ সোমবার দুপুরে উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের চরসাহেবরামপুর গ্রামের একটি কাশবন থেকে গিয়াস উদ্দীনের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত গিয়াস উপজেলার চর মহেষপুর গ্রামের লালমিয়া সরদারের ছেলে। গত ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে গিয়াস উদ্দীনকে অপহরণ করা হয় বলে দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা।
২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সেলিমপুর গ্রামের নজির হাওলাদারের ছেলে সালাহ উদ্দীন এবং মতি মৃধার ছেলে দুলাল মৃধার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী নির্বাচনি সমাবেশ করার অভিযোগে হামলা চালিয়ে গিয়াস উদ্দীনকে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পরে নিহতের স্ত্রী রিমা বেগম থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা না নিয়ে উল্টো তাকে থানা হাজতে আটকে রাখে। সোমবার দুপুরে চরসাহেবরামপুর গ্রামের কাশবন থেকে গিয়াস উদ্দীনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলার বাদী ধলু সরদার বলেন, পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেষ্টা করে। গিয়াসকে অপহরণের পর মামলা নেয়নি পুলিশ। একইভাবে হত্যার পরও মামলা নিতে চায়নি মুলাদী থানা পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গিয়াস আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে অপমৃত্যুর মামলা হবে। তবে পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে মামলা নিতে বাধ্য হয়েছে মুলাদী থানা পুলিশ।
মুলাদী থানা পুলিশের ওসি জিয়াউল আহসান বলেন, ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে না। তাই কোন ধারায় মামলা হবে তা নিয়ে দ্বিধা ছিল। তারপরও হত্যা মামলা নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।