গেলো বড়দিনেই একাডেমি গ্র্যাজুয়েট হামজা চৌধুরীকে আগামী জানুয়ারিতে ধারে খেলতে পাঠাতে চেয়েছিল ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটি। কিন্তু এখন সেই সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে। কারণ, বর্তমান ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে অসাধারণ জয়ে তার ভূমিকা ছিল অনন্য। তারও আগে চেলসির বিপক্ষে ম্যাচেও ছিলেন উজ্জ্বল। সব মিলিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তাকে উঠতি তারকা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
কে এই হামজা চৌধুরী?: লেস্টার সিটির ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ ফুটবলার। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের সদস্যও তিনি। তার পিতা যদিও ক্যারিবীয় তথা গ্রেনাডিয়ান, কিন্তু তার মা বাংলাদেশের সিলেটের হবিগঞ্জের মানুষ। তার বাড়ি জেলাটির বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে (দেওয়ান বাড়ি)। বর্তমানে হামজার দুই অভিভাবকই বাংলাদেশি।
এই বিষয়ে হামজা বলেন, আমার দুই অভিভাবকই বাংলাদেশি এবং আমি এশীয় পরিবারে বেড়ে উঠেছি। কিন্তু আমার মধ্যে ক্যারিবিয়ান রক্ত আছে, কারণ আমার পিতা গ্রেনাডার। আমাদের পরিবার অনেক বড়।
মাত্র সাত বছর বয়সে লেস্টার একাডেমিতে যোগ দেন হামজা। সেই থেকে দলে নিয়মিত খেলে চলেছেন। প্রথমে যেই দলের ভক্ত ছিলেন সেই লেস্টার সিনিয়র দলেরই সদস্য হয়েছেন এই ঝাঁকড়া চুলের তরুণ। তার বয়স যখন মাত্র ১৬, তখনই তার দিকে নজর দেয় বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাব।
গত নভেম্বরে টটেনহামের বিপক্ষে ২-১ গোলে জেতা ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত হিসেবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার গৌরব অর্জন করেন হামজা। এর আগে ২০১৬ সালে ধারে বার্টন অ্যালবিয়নের হয়ে খেলেছেন তিনি। সেখানেও দলকে লিগ ওয়ানে উন্নীত করায় ভূমিকা রেখেছেন।
এশিয়ান ফুটবলারদের জন্য দারুণ এক উদাহরণ হামজা। কিন্তু তার কাছে এটা বিশেষ কিছু মনে হয়নি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে হামজা বলেন, আমি এশিয়ান ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি বলে কোনো চাপ অনুভব করি না। আমার পরিবার আমার পাশে থেকে উৎসাহ জুগিয়েছে। তারা আমাকে খেলাটা উপভোগ করতে বলে। আমি যদি কাল বলি আর খেলবো না তাতেও তারা বাধা দেবে না।’
পারিবারিক জীবন: বয়স ২১ হলেও এরইমধ্যে এক সন্তানের পিতা হয়েছেন হামজা। এইতো গেলো বড়দিনে তার সঙ্গিনী অলিভিয়া টুইটারে তাদের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ছবি পোস্ট করেন। অলিভিয়া পেশায় ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। এই দম্পতি আইলেস্টোনে বাস করেন।
হঠাৎ করে কিভাবে লাইমলাইটে: লেস্টারের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের অধিনায়কত্ব থেকে চেলসির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক হয় হামজার। সেই ম্যাচে জয় পায় লেস্টার। মিডফিল্ডে তার পারফরম্যান্স সবার নজর কাড়ে। ইংলিশ মিডিয়া ওই ম্যাচের আগে রিপোর্ট করেছিল ম্যাচটি না জিতলে কোচ পুয়েলকে বরখাস্ত করা হতে পারে। ১-০ গোলের জয়ে চাকরি বেঁচে যায় পুয়েলের।
এরপর ‘বক্সিং ডে’ ম্যাচে সিটিকে ২-১ গোলে হারানোর ম্যাচে শুরুর একদশে নেমে কোচের আস্থার প্রতিদান দেন। এরইমধ্যে তাকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ধরে রাখতে নতুন চুক্তি করেছে লেস্টার।
গত মে মাসে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলে জায়গা পেয়ে ৪ ম্যাচ খেলেছেন হামজা। লেস্টারে তার পারফরম্যান্স দেখে এটা বলাই যে হয়তো আগামী বছরই ইংল্যান্ড সিনিয়র দলের হয়ে মাঠ মাতাতে দেখা যাবে তাকে।
লেস্টার তারকা হামজা চৌধুরীখেলার ধরন: একজন মিডফিল্ডারের যা যা গুণ থাকা দরকার তার সবই আছে হামজার। শক্তিমত্তা, পাসিং দক্ষতা আর আক্রমণে উঠে আসার দক্ষতা মিলিয়ে তাকে পূর্ণাঙ্গ মিডফিল্ডার হিসেবেই অভিহিত করা হচ্ছে। চেলসির বিপক্ষে ম্যাচে রক্ষণের জাল ছিন্ন করার দক্ষতা আর ম্যানসিটির বিপক্ষে ডি-বক্সের সামনে তার সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন। বেশ ভয়-ডরহীন ফুটবল উপহার দিয়েছেন তিনি।
হামজার চুল: হামজার দিকে চোখ গেলে সবার আগে তার চুল সবার নজর কাড়বে। অনেকটা আফ্রিকান ধাচের এই স্টাইলে এর আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বেলজিয়ান তারকা ফেলাইনিকেও দেখা গেছে। যদিও এই স্টাইলের জন্য অনেকের সমালোচনা সইতে হয় হামজাকে, কিন্তু তিনি এই স্টাইল পাল্টাবেন বলে মনে হয়না।
সৌজন্যে- বাংলানিউজ