টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর ফুরফুরে মেজাজে বাংলাদেশ। সেই ফুরফুরে মেজাজই কি তবে কাল হয়ে দাাঁড়াল? সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্যারিবীয়দের সামনে দাঁড়াতেই পারলো না বাংলাদেশ। ১৩০ রানের লক্ষ্য মাত্র ১০.৫ ওভারেই টপকে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারালো ক্যারিবীয়রা।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ক্যারিবীয় বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। একমাত্র সাকিব আল হাসান ছাড়া। ৪৩ বলে সর্বোচ্চ ৬১ রান করেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ রান করেন আরিফুল হক।
জবাব দিতে নেমে ব্যাটে ঝড় তোলেন সাই হোপ। মাত্র ১৬ বলেই তিনি করেন হাফ সেঞ্চুরি। ৫৫ রান করে তিনি আউট হয়ে গেলেও ১৩০ রান করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। মাত্র ১০.৫ ওভারেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ক্যারিবীয়রা। সাকিব আল হাসানকে টানা ২ ছক্কা এবং একটি বাউন্ডারি মেরে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন কিমো পল।
টসটাই একমাত্র পক্ষে গিয়েছিল বাংলাদেশের। দুপুর সাড়ে ১২টায় খেলা শুরু। দিনের আলো থাকতেই শেষ হয়ে যাবে। শিশিরের কোনো ঝামেলা হবে না। এ চিন্তা থেকেই টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তটাই বুমেরাং হয়ে গেলো বাংলাদেশের জন্য।
টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর ক্যারিবীয় বোলারদের তাণ্ডবের সামনে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে শুরু করে টাইগারদের। দ্বিতীয় ওভারেই শেলডন কটরেলের বলে মিড অফে ব্র্যাথওয়েটের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান ওপেনার তামিম ইকবাল।
পরের ওভারে ওশান থমাসের বলে একইভাবে ক্যাচ দেন লিটন দাসও। এবারও ফিল্ডার ব্র্যাথওয়েট। মিডঅফে আরও সহজে ক্যাচটি ধরেন তিনি। ১৯ রানে ২ উইকেট পড়ার পর যখন সৌম্য সরকারের ওপর প্রত্যাশা ছিল একটি জুটি গড়ার, সে প্রত্যাশা আর পূরণ করতে পারলেন না তিনি। সেই কটরেলের বলেই মিডউইকেটে রোভম্যান পাওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সৌম্য।
প্রত্যাশার পাল্লাটা এবার চলে আসে মুশফিকের ওপর। তিনিও সে চাপ নিতে পারলেন না। যদিও দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন মুশফিক। দ্রুত রান নিতে গিয়ে তিনি পাওয়েলের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে গেলেন।
মুশফিক আউট হয়ে গেলেও ততক্ষণ পর্যন্ত রানের গতি ভালোই ছিল। কিন্তু এরপর মাহমুদউল্লাহ উইকেটে এসে রানের গতি পুরোপুরি থামিয়ে দেন। ১৯ বল খেলে তিনি করেন মাত্র ১২ রান। তার স্লো ব্যাটিংয়েই রান তোলায় অনেকটা ছন্দপতন। কিন্তু নিজেও টিকে থাকতে পারেননি। সেই কটরেলের বলেই উইকেটের পেছনে সাই হোপের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান।
স্লো ইনিংস খেলেন আরিফুল হকও। ১৮ বল মোকাবেলা করে তিনি করেন ১৭ রান। শেষ পর্যন্ত ফ্যাবিয়েন অ্যালেনের বলে নিকোলাস পুরানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। এরপর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মাঠে নেমেই আউট হয়ে যান নামের পাশে মাত্র ১ রান যোগ করে।
সাইফুদ্দিন আউট হওয়ার পর ফিরে যান বাংলাদেশের হয়ে দিনের সেরা পারফরমার সাকিব আল হাসান। ৪৩ বলে ৮টি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কার সমন্বয়ে করেন ৬১ রান। মূলতঃ সাকিবের এই ইনিংসের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ ১২৯ রান পর্যন্ত যেতে পারলো।
মেহেদী হাসান মিরাজ ৮ রান করে এবং সর্বশেষ শূন্য রান করে আউট হয়ে যান মোস্তাফিজুর রহমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে শেলডন কটরেল ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে একাই নেন ৪ উইকেট। ২ উইকেট নেন কিমো পল। ১ উইকেট করে নেন ওশান থমাস, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট, ফ্যাবিয়েন অ্যালেন।
জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই মারমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩.২ ওভারেই ৫১ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন লুইস আর হোপ। ১১ বলে ২৩ রান করে বিদায় নেন এভিন লুইস। সাইফউদ্দিন নেন তার উইকেট। তাতেও সাই হোপের ব্যাটিংয়ের তেজ কমেনি। ১৬ বলেই হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। ৩টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কা মারেন ৬টি।
দলীয় ৯৮ রানে সাই হোপের উইকেট তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ততক্ষণে জয়ের আসল কাজটি করে দিয়ে গেছেন তিনি। বাকি কাজ অনায়াসেই শেষ করে ফেলেন নিকোলাস পুরান এবং কিমো পল। ১৭ বলে ২৩ রানে পুরান এবং কিমো পল ১৪ বলে অপরাজিত থাকেন ২৮ রান করে।