নিজে বেশ কয়েকবার বলেছেন, এখনো বলেন- তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারতো ২০১১ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে খেলতে না পারার পরই। সেবার এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে, আর কখনো ক্রিকেট খেলতে পারবেন কি-না সে বিশ্বাসই হারিয়ে গিয়েছিল তার।
তবুও তিনি খেলেছেন, এখনো খেলে যাচ্ছেন দোর্দণ্ড প্রতাপে। যার ক্যারিয়ার থেমে যেতে পারতো আরও সাত বছর আগে, সেই মাশরাফি বিন মর্তুজাই এখন দাঁড়িয়ে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ ওয়ানডে খেলার মাইলফলকের সামনে। আগামীকালই (রোববার) সেই গৌরবময় ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচটি খেলতে নামবেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
সেই বিভীষিকাময় ২০১১ সাল কাটিয়ে মাঠে ফেরা এবং এখনো খেলা চালিয়ে নেয়ার পুরো কৃতিত্বটাই মাশরাফি দেন মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে এবং তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের। সে সময়টাকে পেছনে ফেলে মাশরাফি শুধু মাঠেই ফেরেননি, হয়েছেন দেশের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়কও।
যার অধীনে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খেলেছে বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। জয়-পরাজয়ের অনুপাতেও মাশরাফির চেয়ে এগিয়ে নেই দেশের অন্য কোনো অধিনায়ক। এসব দলীয় সাফল্যের কীর্তিগাঁথা, যেখানে রয়েছে খেলোয়াড় কিংবা অধিনায়ক মাশরাফির বড় ভূমিকা।
তবে স্রেফ ব্যক্তি খেলোয়াড় হিসেবেও যে মাশরাফি কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই সেটিও প্রমাণ করে তার পরিসংখ্যান। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দুইশ ওয়ানডে খেলার আগেই ছুঁয়েছেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আড়াইশ উইকেটের মাইলফলক। ২০১৪ সালে অধিনায়কত্ব নেয়ার পর থেকে তার চেয়ে বেশি উইকেট নেই বাংলাদেশের আর কোনো বোলারের।
দেশের পেসারদের মধ্যে সবার উপরে মাশরাফি- এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই কারো মনে; কিন্তু গত কয়েক বছরে মাশরাফি ছাড়িয়ে গেছেন স্পিনারদেরও। বিশেষ করে সাকিব আল হাসানকে। ইনজুরি শঙ্কা মাথায় রেখেও ফিটনেসের অভাবনীয় উন্নতি ঘটিয়ে খেলেছেন গত কয়েকবছরের প্রায় সবক’টি ওয়ানডে ম্যাচ।
এখনো পর্যন্ত খেলা ১৯৯টি ওয়ানডে ম্যাচে মাশরাফির উইকেটসংখ্যা ২৫২টি। যা কি-না দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এছাড়া দেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটাও নিজের দখলেই রেখেছেন ৩৫ বছর বয়সি মাশরাফি। ২০০৬ সালে কেনিয়ার জিমখানা মাঠে ২৬ রানে নেয়া ৬ উইকেট এখনো পর্যন্ত যে কোনো বাংলাদেশি বোলারের ম্যাচসেরা বোলিংয়ের পারফরম্যান্স।
‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত মাশরাফি ব্যাটটাও নেহায়েত মন্দ চালাননি ক্যারিয়ার জুড়ে। প্রায় ৯০ স্ট্রাইকরেটে তার নামের পাশে রয়েছে ১৭২২ রান। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা ৫১ রানের। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১৬ বলে খেলেছিলেন ৪৪ রানের টর্নেডো ইনিংস। যা কি-না বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের কমপক্ষে ১০ বল খেলা ইনিংসগুলোর মধ্যে সেরা স্ট্রাইকরেটের ইনিংস। সে ম্যাচেই প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনশ রান করতে পেরেছিল বাংলাদেশ।
রোববার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলার মাধ্যমে টাইগার অধিনায়ক দুইশো ওয়ানডে খেলার কৃতিত্ব অর্জন করলেও, এর মাঝে রয়েছে সূক্ষ্ম হিসেবের উপাদান। কেননা এখনো পর্যন্ত খেলা ১৯৯টি ওয়ানডের মধ্যে ২টি তিনি খেলেছেন এশিয়া একাদশের হয়ে। তাই রোববার প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে দুইশ ওয়ানডে খেলার রেকর্ড গড়লেও, বাংলাদেশের হয়ে দুইশ ওয়ানডের মাইলফলক ছুঁতে মাশরাফিকে অপেক্ষা করতে হবে সিলেটে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে পর্যন্ত।