গ্রেফতারের ভয়ে বাসা ছেড়ে হোটেলে আত্মগোপন করেছিলেন ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বরখাস্তকৃত শিক্ষিকা হাসনা হেনা। বুধবার রাতে উত্তরার একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভিকারুননিসার শিক্ষিকা হাসনা হেনা থাকেন মগবাজার এলাকার ডাক্তারের গলিতে। কিন্তু অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপন করেছিলেন উত্তরার একটি হোটেলে।
মামলা হওয়ার পর পরিস্থিতি প্রতিকূলে ভেবে হাসনা হেনা ঢাকার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেটা সম্ভব না হওয়ায় উত্তরার একটি হোটেলে আত্মগোপন করেন তিনি। পরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রভাতী শাখার বরখাস্তকৃত এ শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার রাতে তাকে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের হোটেল উত্তরা ইনের একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পূর্ব জোনের একটি টিম।
ওই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচণার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তিন নম্বর আসামি হাসনা হেনা। মামলা হওয়ার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।
গ্রেফতারের পরপর নারী পুলিশ সদস্যরা তাকে মাইক্রোবাসে করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। ডিবি কার্যালয়ে আনার পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবির এক কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার সকালে আবারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুরেই তার রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হতে পারে বলে জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার খন্দকার নুরুন্নবী বলেন, বুধবার রাত ১১টার দিকে উত্তরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাতি শাখার প্রধান জিনাত আখতার এবং অরিত্রীর শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে র্যাব-পুলিশকে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে তাদের এমপিও বাতিলের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রির বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগ এনেছিল। এ জন্য অরিত্রির মা-বাবাকে ডেকে নেন ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ।
তাদের ডেকে মেয়ের সামনেই অপমান করে বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে অরিত্রিকে নকলের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হবে। এ অপমান সইতে না পেরে বাসায় এসে অরিত্রি আত্মহত্যা করে।
পুলিশ ও পরিবারের তথ্যানুযায়ী, সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর শান্তিনগরে সাততলা ভবনের সপ্তম তলায় নিজ ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় অরিত্রিকে পাওয়া যায়।
এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসকরা অরিত্রিকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। অরিত্রির বাবা দিলীপ কুমার একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী।
সৌজন্যে- যুগান্তর