Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
death-body
ফাইল ছবি

জীবিকার টানেই পরবাসী। নিজ দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে এসে থিতু এবং কষ্টার্জিত টাকাগুলো মাস শেষে দেশে থাকা প্রিয়জনের কাছে পাঠাতে বাধ্য হন। পশ্চিমা যারা থাকেন তারা হয়তো মানবাধিকার ভোগ করতে পারেন আজকাল, কিন্তু যারা মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যান জীবন আর জীবিকার টানে, তারা অনেকটা পরাধীন জীবন যাপন করেন।

দিনেদিনে প্রবাসীদের মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এসব মৃত্যুর বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছে, অনিরাপদ কর্ম-পরিবেশ, আর্থিক ঋণ, খাদ্যাভ্যাসসহ মানসিক চাপই বেশিরভাগ প্রবাসীর মৃত্যুর কারণ। প্রতিদিন গড়ে আট থেকে ১০ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে আসে। ২০০৫ সালে এক হাজার ২৪৮ জনের মরদেহ দেশে এলেও ২০০৯ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ।

chardike-ad

২০১৫ সালেও বাংলাদেশে এসেছে মোট তিন হাজার ৩০৭ জন প্রবাসীর মরদেহ। আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, একই বছরের ডিসেম্বরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে ২২০ জন প্রবাসীর মরদেহ। তাদের মধ্যে ১৮২ জনের মৃত্যুকেই খুব স্বাভাবিক বলা যায় না। অধিকাংশেরই মৃত্যুর কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ, কর্মক্ষেত্র বা সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা ক্যানসারের মতো জটিল কোনো রোগ।

প্রবাসে একা থাকা, নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, খারাপ পরিবেশে কাজ করা ইত্যাদি কারণে হৃদরোগ বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বয়স ৩৫ হওয়ার আগেই অনেকের জীবন অতলে হারিয়ে গেছে। বর্তমানে মৃতের সংখ্যা তিনগুণে দাঁড়িয়েছে। গত একযুগে দেশে প্রবাসী কর্মীর মরদেহ দেশে এসেছে ৩১ হাজার ৪৬৭ জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও বেশি।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের জরিপে দেখা যায়, গত এক দশকে বিদেশ থেকে ২২ হাজার ৬৫১ জনের লাশ ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৫৫৭ জনই কাজ করতেন মধ্যপ্রাচ্যের কোনো-না-কোনো দেশে। ভাগ্যান্বেষণে গিয়ে লাশ হয়ে ফেরেন।

পরিসংখ্যানে জানা যায়, স্বাভাবিক মৃত্যুর বাইরে সড়ক দুর্ঘটনা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, আত্মহত্যা এমনকি প্রবাসে বাংলাদেশিরা খুনের ঘটনারও শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অপরাধে ৪৭টি দেশে ৭৮ জন বাংলাদেশিকে ওইসব দেশের আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। মানবিক কারণে ২৯ জনের মৃত্যুদণ্ড রহিত করে তাদের অন্য দণ্ড দিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

মৃত্যু ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ওরা আমাদের রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে। অধিকাংশ দেশে নিজ খরচে প্রবাসীদের চিকিৎসা করতে হয়। ট্যাক্স তো দূরের কথা প্রতিটি দেশে বাংলাদেশি খরচে আলাদা চিকিৎসা ইউনিট খোলা প্রয়োজন যেখানে প্রবাসীরা বিনে পয়সা বা অল্প পয়সায় চিকিৎসা করতে পারবে। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের কল্যাণে নজরদারি বাড়াতে হবে। এর মানে এই নয় যে তাদের উপার্জনের ওপর নজরদারি করতে হবে। তবেই আমরা প্রবাসী বান্ধব হতে পারবো।