আমেরিকা, ইউকে, অস্ট্র্রেলিয়া ও কানাডার পাশাপাশি এশিয়ার দেশ চীনও এখন বিদেশী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে শুরু করেছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ থেকেই শিক্ষার্থীরা এখানে আসছে পড়াশোনা করতে। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ যখন শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের সংখ্যা হ্রাস করছে তখন চীন স্কলারশিপের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুণ। বিশেষ করে আমেরিকাতে পড়াশোনার সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভিসা দিচ্ছে না দেশটি। সে ক্ষেত্রে চীন সম্পূর্ণ বিপরীত। বিশ্বের সব দেশের শিক্ষার্থীর জন্য পড়াশোনা এখানে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। এখানে একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে যদি কোনো শিক্ষার্থী স্কলারশিপ পায় আবাসন তার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এ সুবিধা অন্য কোনো স্কলারশিপে নেই।
চায়না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীনে ২০১৭ সালে পড়াশোনা করতে আসছে চার লাখ ৪২ হাজার বিদেশী শিক্ষার্থী। ২০০০ সালে যা ছিল মাত্র ৫২ হাজার ১৫০ জন। ২০১২ সালের চেয়ে বর্তমানে যা প্রায় ৩৫ গুণ বেশি। চীনের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে বিদেশী শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রতি বছর পাঁচ লাখে উত্তীর্ণ করা। চীনে বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ পড়াশোনা করছে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে, ১৪ শতাংশ মাস্টার্স ডিগ্রি এবং পিএইচডিতে এবং ৩০ শতাংশ প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি লেভেলে। চীনে সব চেয়ে বেশিসংখ্যক প্রার্থী পড়তে আসে পাশের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। তারপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে আমেরিকা, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, ভারত, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখিস্তান, জাপান ও ভিয়েতনাম। বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ এখানে আসে চায়নিজ ভাষা শিখতে। বাকিদের পছন্দ পর্যায়ক্রমে শিক্ষা, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কৃষি। বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ চীনে আসে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে, বাকি ৬০ শতাংশ আসে ব্যক্তিগত খরচে।
চীনের রাজধানী বেইজিং এবং অত্যাধুনিক শহর সাংহাইকে বলা হয় বিদেশী শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। এখানকার বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে সব চেয়ে বেশি পরিমাণ ইংলিশ টট প্রোগ্রাম। বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভালো সংবাদ এই যে, বেল্ট অ্যান্ড রোড স্কলারশিপের আওতায় চায়না সরকার প্রতি বছর অতিরিক্ত ১০ হাজার স্কলারশিপ ঘোষণা করেছে, এ সুবিধা পাবে ওই প্রকল্পের অধীনে ৬৪টি দেশ। এ তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। এ দেশগুলো থেকে প্রতি বছর দুই লাখ শিক্ষার্থী চীনে পড়তে আসবে বলে ধারণা করছে চায়না সরকার।
ইউনেস্কোর এক তথ্যানুযায়ী চীন থেকে প্রতি বছর বিদেশে পড়তে যায় আট লক্ষ শিক্ষার্থী। তাদের প্রথম পছন্দ আমেরিকা, তারপর ইংল্যান্ড এবং অস্ট্র্রেলিয়া। আমেরিকায় সব চেয়ে বেশি বিদেশী শিক্ষার্থী পড়তে আসে চীন থেকে। এই সংখ্যা তিন লাখ যা আমেরিকায় মোট বিদেশী শিক্ষার্থীদের ৩২ শতাংশ। এর পরের স্থান হলো ভারতের। ভারত থেকে আমেরিকায় প্রতি বছর পড়তে যায় দেড় লক্ষ শিক্ষার্থী। তারপরের তালিকায় রয়েছে সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডা। বিদেশে চীনের শিক্ষার্থীদের পছন্দের বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্স।
এবার আসা যাক চীনে কিভাবে স্কলারশিপের আবেদন করা যায়? মূলত দুইভাবে আবেদন করা যায। একটি হলোÑ সংশ্লিষ্ট দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের মাধ্যমে এবং অন্যটি হলো সরাসরি বিশ^বিদ্যালয়ে আবেদন করা যায়। এখানে আবেদন করলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। দূতাবাসের স্কলারশিপ থাকে নির্দিষ্ট এবং অনেক প্রতিযোগিতামূলক। বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপগুলো হলোÑ কাস টাওয়াস স্কলারশিপ, চায়নিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল বা সিএসসি, রোড অ্যান্ড বেল্ট স্কলারশিপ, মফকম স্কলারশিপ, কনফুসিয়াস স্কলারশিপ, চায়নিজ লোকাল গর্ভনমেন্ট স্কলারশিপ, ফরেন গর্ভনমেন্ট স্কলারশিপ, বিশ^বিদ্যালয় স্কলারশিপ, ইয়েস চায়না স্কলারশিপ এবং এন্টারপ্রাইজ স্কলারশিপ। তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ স্কলারশিপ দিয়ে থাকে চায়নিজ স্কলারশিপ কাউন্সিল বা সিএসসি। আর্থিক দিক দিয়ে সব চেয়ে ভালো স্কলারশিপ হলো কাস টাওয়াস স্কলারশিপ এবং ইয়েস চায়না স্কলারশিপ। তারপরই সিএসসি এবং মফকম স্কলারশিপ।
কাস টাওয়াস শুধুমাত্র পিএইচডি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জন্যই মূলত এই স্কলারশিপ। কাস টাওয়াসে আগেভাগে শিক্ষকের সম্মতির প্রয়োজন হয়, ন্যূনতম যোগ্যতা মাস্টার্স পাস এবং বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ৩৫। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রবন্ধ থাকলে এই স্কলারশিপ পাওয়া সহজ হয়। বর্তমানে সিএসসি এবং কাস টাওয়াস স্কলারশিপে আবেদন করার সময় চলছে। মফকম স্কলারশিপ প্রদান করা হয় অর্থ মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের মাধ্যমে।
স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে যা যা প্রয়োজন তা হলো- অন্তত ছয় মাসের মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্ট, নোটারি কর্তৃক সত্যায়িত সব নম্বরপত্র এবং সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ফরেন মেডিক্যাল সার্টিফিকেট, স্টাডি প্লান, আই ই ইল টিএস সার্টিফিকেট থাকলে ভালো না হলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা হয়েছে এমন একটি সার্টিফিকেট, দু’টি রিকমেন্ডেশন লেটার, বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনপত্র, স্কলারশিপের জন্য আবেদনপত্র পূরণ করা। কোনো বিশ্বিবদ্যালয়ে শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদন করলেই হয়, আবার কোথাও কোথাও অনলাইনের আবেদনের সাথে হার্ড কপিও পাঠাতে হয়। স্কলারশিপের আবেদন সংক্রান্ত সব কিছু ওয়েবপেজে উল্লেখ আছে। স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য নিম্নে উল্লেখিত ওয়েবপেজগুলো দেখা যেতে পারে। সিএসসি স্কলারশিপ (www.csc.edu.cn), কাস টাওয়াস স্কলারশিপ (www.twas.org), মফকম স্কলারশিপ (www.cscscholarship.org/mofcon).