প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে হয় প্রবাসীদের। প্রত্যাশা ও জীবন সংগ্রামের চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের এ সারথিরা। জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর একটি অংশ প্রতিনিয়ত পরবাসে যাচ্ছেন জীবিকার তাগিদে। দিনের পর দিন তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। সুন্দর জীবনের খোঁজে ব্যস্ত এই প্রবাসীরা। তবে বিনিময়ে কি পাচ্ছে। দেশইবা তাদের কতটুকু চাহিদা পূরণ করছে? এত কিছুর পরও শুনতে হয় কামলা। হায়রে প্রবাস জীবন!
আসলেই কি সুন্দর একটা জীবনের দেখা পায়? স্বপ্ন কি সবার পূরণ হয়? হয়তো কারো হয় কারো হয় না। যখনই বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির কথা আসে তখন সবাই একবাক্যে স্বীকার করে প্রবাসী বাঙালিদের অবদানের কথা। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।
কিন্তু কেমন কাটে এই প্রবাসীদের জীবন তার খবর কয়জন-ই বা রাখে? সরকারও বা কি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে তাদের? সমাজ-ই বা তাদের কোন চোখে দেখে? সমাজের প্রতিটি স্তরে চরমভাবে অবহেলা করা হয় প্রবাসীদেরকে। সমাজের উঁচুতলার মানুষেরা তাদের কথা শুনলে নাক সিটকায় এমনকি অনেক সময় ‘কামলা’ বলে থাকে।
অথচ এই প্রবাসী মানুষটাই একটি পরিবারের শক্তি। দেশের অর্থনৈতিক মেরদণ্ডের অংশীদার। শ্রমবাজারে যারা শ্রম বিক্রি করে তাদের উপার্জন হয় মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। দেশীয় আয়ে বড় অংক মনে হলেও থাকা খাওয়া আর ব্যক্তিগত খরচের পর কত টাকাই বা দেশে পাঠানো যায়। করতে হয় ওভার টাইম।
২৪ নভেম্বর মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এনআরবির আয়োজনে এসো গড়ি মাতৃভূমি শীর্ষক সেমিনার। সেমিনারে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জীবনমান নিয়ে আলোচনা হলো। ওরা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তাদের প্রেরিত অর্থ পরিবারের প্রয়োজনই মেটায় না, তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে এবং নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোনো দেশের প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশ্ব মন্দার প্রভাব তেমন একটা অনুভব হয়নি। অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিয়াস হিসেবে কাজ করে। রেমিট্যান্স আমাদের মোট অভ্যন্তরীণ আয় বা জিডিপির ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ। জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিট্যান্স ।
‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড রেমিট্যান্স: রিসেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড আউটলুক’-২০১৮ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে নবম অবস্থানে রয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এক হাজার ৩৫০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আর সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে প্রায় ৭৮ লাখ বাংলাদেশি বাস করেন, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বলছে, ৯৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন দেশে কাজ করছে।
প্রবাসী রেমিট্যান্স আমাদের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখায়। উন্নয়নের অংশীদার হয়। সেই রেমিটেন্সকে বাধা প্রদান করলে দেশের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি হবে। বিশ্বের ৩৩তম বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশ আমাদের বাংলাদেশ। রেমিট্যান্স’র ভূমিকাও অনেক। পরিবার লাখ লাখ টাকা খরচ করে এদের বিদেশে পাঠায়। তখন সরকারিভাবে একটু সহযোগিতা করলে দেশের বেকার সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে প্রবাসীর সংখ্যা একটু হলেও বেড়ে যাবে। দেশে নানা পেশার মানুষ অধিকার আদায়ে আন্দোলনে নামে। পরে তারা ঠিক অধিকার আদায় করে নেয়।
দেশে উন্নয়নের এই মহাশক্তি রেমিট্যান্স যেমন দেশের জন্য প্রয়োজন ঠিক তেমনি রেমিটেন্স যোদ্ধাদের বাঁচানোও আমাদের সবার দায়িত্ব। ওদের অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই। বরং আমি, আপনি, সরকারকে যৌথভাবে ওদের সমস্যা সমাধান করে এই যোদ্ধাদের আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তবেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ইস্পাতের মতো শক্তিশালী হবে।
লেখক- আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে
সৌজন্যে- জাগো নিউজ