Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

nizami-sayeedসব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নাটকীয় মোড় নিয়েছে পাবনা-১ আসনের নির্বাচনী মাঠ। এ আসন থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার অনেকটা নাটকীয়ভাবে নিজামীর আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন নেন আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ।

সোমবার গণফোরামে যোগ দিয়ে দুপুরে গণফোরামের আরামবাগ অফিস থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। নিজামীর আসনে অধ্যাপক আবু সাইয়িদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

chardike-ad

পাবনা-১ (সাঁথিয়া উপজেলা ও বেড়া উপজেলার আংশিক) আসনেও সারাদেশের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হাওয়া বইছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী নেতাকর্মীরা ব্যাপক জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে পাবনা-১ আসনে জনসংযোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং ভোটারদের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ নাকি শামসুল হক টুকু মনোনয়ন পাচ্ছেন সেদিকে নজর ছিল সবার। এর মধ্যে রোববার আওয়ামী লীগের নৌকার টিকিট পান শামসুল হক টুকু। আওয়ামী লীগের টিকিট না পেয়ে সোমবার গণফোরামে যোগ দিয়ে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন নেন আবু সাইয়িদ।

পাবনা-১ আসনটিকে বরাবরই ভিআইপি আসন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কারণ স্বাধীনতার পর থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ আসন থেকে যিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন; পরে তিনিই মন্ত্রী হয়েছেন।

এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রী হন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের (পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী), মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (শিল্পমন্ত্রী) ও শামসুল হক টুকু (স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী)। এছাড়া মেজর জিয়াউর রহমানের আমলে মির্জা আব্দুল হালিম মন্ত্রী হন। এসব কারণে বরাবরই পাবনা-১ আসনের দিকে নজর থাকে সবার।

জানা যায়, এ আসনে বরাবরই দাপুটে অবস্থানে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ। এ আসন থেকে তিনি ১৯৭০ ও ১৯৯৬ সালে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে ছিটকে পড়েন সাইয়িদ। এই নির্বাচনে মনোনয়ন পান অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু।

সেই সময় আবু সাইয়িদ সংস্কারবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শামসুল হক টুকু আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন পেয়ে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীকে পরাজিত করে বিজয়ী এবং প্রতিমন্ত্রী হন।

এরপর তিনি ২০১৪ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন পান। নির্বাচনে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনে আবু সাইয়িদকে পরাজিত করে বিজয়ী হন টুকু।

এর আগে ১৯৯১ সালে এ আসনে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে পরাজিত করে জয়ী হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আবু সাইয়িদ নিজামীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন।

২০০১ সালের নির্বাচনে আবার নিজামী বিজয়ী হন আবু সাইয়িদকে পরাজিত করে। অবশ্য আবু সাইয়িদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়েছিলেন।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ছিটকে পড়া এই বর্ষিয়ান নেতা এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী ছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং তার ঘনিষ্ঠজনরা বলেছিলেন বরফ গলেছে; কিন্তু এরপরও মনোনয়ন পাননি তিনি।

ইতোমধ্যে এবার আবু সাইয়িদ মনোনয়ন পাচ্ছেন এমন খবরে আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় অর্ধশতাধিক সভা-সমাবেশ করেন। সেইসঙ্গে জেলাজুড়ে লাগিয়েছেন আওয়ামী লীগের ব্যানার ফেস্টুন পোস্টার।

কিন্তু শামসুল হক টুকু আওয়ামী লীগের মনোয়নয়ন পাওয়ায় ভেঙে পড়েন সাইয়িদের সমর্থকরা। সোমবার ঐক্যফ্রন্ট থেকে চির বিরোধী নিজামীর আসন থেকে মনোনয়ন নেন তিনি।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ