বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৩৭ জন ক্যাজুয়াল ক্রুর চাকরি স্থায়ীকরণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডেভোকেট মো. ইমাম হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন মো. হাফিজুর রহমান। বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ মামলার ১২ বিবাদীকে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাদের চাকরি স্থায়িকরণের নির্দেশ দেয়া হয়।
মামলায় বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাড়াও অপর বিবাদীরা হলেন- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনাপর্ষদ চেয়ারম্যান, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ-বেবিচক চেয়ারম্যান, বিমানের পরিচালক (প্রশাসন), বিমানের গ্রাহক সেবা বিভাগের পরিচালক, বিমানের ফ্লাইট অপারেশন পরিচালক, গ্রাহক সেবা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক, গ্রাহক সেবা বিভাগের ডেপুটি মহাব্যবস্থাপক, বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস শাখার ব্যবস্থাপক, ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগের প্লানিং অ্যান্ড সিডিউলিং শাখার ব্যবস্থাপক এবং নিয়োগ শাখার ব্যবস্থাপক।
গত ৫ মে বিমানের কেবিন ক্রু শারমিন জাহানসহ ১৩৭ জনের পক্ষে রিট আবেদনটি করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল ১৩৭ ক্রুর চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য বিমানের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিসও পাঠানো হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নোটিসের জবাব না দেয়ায় রিট করা হয়।
নোটিসে বলা হয়, ‘আবেদনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৩৭ জন ক্যাজুয়াল কেবিন ক্রু চাকুরীস্থলে বৈষম্যের শিকার। তাদের বেতনের সঙ্গে ইনক্রিমেন্ট যোগ হয় না। শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না এই অস্থায়ীরা। তাদের ক্ষেত্রে নৈমিত্তিক, বার্ষিক, অসুস্থতাজনিত ও মাতৃত্বকালীন ছুটিও নেই। কোনো কারণে দায়িত্ব পালন না করলে অনুপস্থিত দেখিয়ে দৈনিক ৭০০ টাকা বেতন কাটা হয়। অতিরিক্ত সময় বা বাড়তি কাজ করলেও পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। জরুরি অবস্থায় কাজ করলে স্থায়ীদের বাড়তি সুবিধা দিলেও অস্থায়ীদের তা দেয়া হয় না। এভাবে ফ্লাইং অ্যালাউন্স, ওভারটাইম, সরকারি ছুটি, পোশাক ক্রয়ের টাকাসহ সবকিছুতে অস্থায়ীরা বৈষম্যের শিকার।’
১৩৭ কেবিন ক্রুর চাকরি স্থায়ীকরণে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশের বিষয়ে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, ‘এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনাটি আমরা এখনও পাইনি। পেলে নিয়ম-মাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পর বিমান কর্তৃপক্ষ কোনো আপিলে যাবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ জানান, ১৩৭ ক্যাজুয়াল কেবিন ক্রুর চাকরি স্থায়ীকরণে হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দিয়েছে- এমনটি শুনেছি। কিন্তু আমার হাতে কোনো প্রমাণ আসেনি। নির্দেশনা পেলে বিমান পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।’
বিমানের কাস্টমার সার্ভিস সূত্র জানায়, দু-একজন কর্মকর্তার স্বজনপ্রীতি আর অনিয়মের কাছে জিম্মি বিমানের গ্রাহক সেবা বিভাগ। এখানে কেউ কেউ ব্যাপক সুবিধা ভোগ করেন। আবার কাউকে কোনো সুবিধাই দেয়া হয় না। এমনকী অপরাধ না করেও কাউকে গ্রাউন্ডেড আবার কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র চলছে। এ নিয়ে বিমানের কাস্টমার সার্ভিস বিভাবে অসন্তোষ বিরাজ করছে।