মাদারীপুর শহরের শকুনি লেকপাড়ের রাস্তায় গভীর রাতে ফেলে যাওয়া হয় বৃদ্ধা জোবেদা খাতুনকে। দুই কলেজ শিক্ষার্থী পরদিন সকালে হাঁটতে গিয়ে হাতে-মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন তাকে। ভর্তি করেন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে।
হাসপাতালে প্রথম দিন নিজের নাম আর সন্তান-পুত্রবধূ মিলে তাকে ফেলে রেখে যাওয়ার কথাটুকুই বলতে পেরেছিলেন ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধা। তারপর থেকে আর কথা বলতে পারছেন না তিনি। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে এভাবেই পরিচয় না জানা বৃদ্ধা জোবেদার ঠাঁই হয় মাদারীপুর সদর হাসপাতালের বিছানায়। চিকিৎসা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন অসহায় এই মা।
‘জীবন সায়াহ্নে সন্তানদের আদর-যত্ন আর ভালোবাসায় থাকার কথা এই মায়ের। সেই বয়সে গভীর রাতে বৃদ্ধা মাকে ফেলা দেয়া বিকৃত মানসিকতার পরিচয়’ উল্লেখ করে ওই সন্তানদের খুঁজে বের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অনেকে।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের বেডে শোয়া বৃদ্ধা মা চোখ বড় করে তাকিয়ে আছেন, হাত-পায়ে যন্ত্রণার ছাপ। মুখ উঁচিয়ে কি যেন বলতে চাচ্ছেন, কিন্তু পারছেন না।
জোবেদা খাতুনকে উদ্ধারকারী সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বিলাস হালদার ও মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘গত ১ নভেম্বর সকালে ওই বৃদ্ধা মাকে শহরের শকুনি লেকের উত্তর পাড়ের রাস্তা থেকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে জেলা ছাত্রলীগের নেতা পিয়াস শিকদার, নাজমুল হোসেন, মাহমুদ হাসান দিনার, শাওন আহমেদ, অমল কুণ্ডুসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে বিষয়টি বলি। তারাও ওই দিন হাসপাতালে এসে বৃদ্ধার চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেন। ওই দিন বৃদ্ধা নিজের নাম জোবেদা খাতুন ও তাকে তার সন্তান-বউ মিলে মারধর করে ফেলে গেছেন বলে জানান। তারপর থেকে আর কথা বলতে পারেন না। শুধু তাকিয়ে থাকেন। তবে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।’
তারা বলেন, ‘জোবেদা খাতুনের কথায় বোঝা গেছে, আগেরদিন ৩১ অক্টোবর গভীর রাতে বৃদ্ধাকে তার সন্তানেরা ফেলে রেখে যান। আমরা এই বৃদ্ধার পরিচয় পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েছি। তারাও চেষ্টা করছেন। তবে যদি কাউকে না পাওয়া যায়, তাহলে সমাজের কোনো হৃদয়বান ব্যক্তিকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই। না হলে এই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তার।’
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘উদ্ধারের পর থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। কিছু ওষুধের অভাব দেখা দিলে সমাজসেবার সহযোগিতায় এনে চিকিৎসা দিচ্ছি। বর্তমানে বৃদ্ধা কিছুটা সুস্থ হলেও প্রচÐ মানসিক আঘাতে স্মৃতিশক্তি কিছুটা লোপ পেয়েছে। তবে তার আত্মীয়-স্বজনদের পেলে সব ঠিকও হয়ে যেতে পারে।’
বৃদ্ধাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে সরকারী সহযোগিতার কথা জানিয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সন্তানরা যদি এখনো তার মাকে নিয়ে গিয়ে সেবা-যতœ করতে চান, আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। তবে যদি এমন অবস্থায় হাসপাতালে ফেলে রাখেন, তাহলে তাদের পরিচয় পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
‘যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তিও বৃদ্ধাকে নিতে চান, তাহলে তার জিম্মায় দেয়া হবে। আমরা সরকারি পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
সৌজন্যে- ঢাকা টাইমস