এশিয়ার ফোর টাইগারের একটি দক্ষিণ কোরিয়া। জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া আজ উন্নতির শিখরে উঠে গেছে। ১৯৭০ সালে যে দেশটির মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১৭০ ডলার, বর্তমানে সে দেশটির মাথাপিছু আয় দাড়িয়েছে ২৫০০০ ডলারের ও বেশি। তাদের এই উন্নতির পেছনে শিক্ষার উন্নতমান ব্যাপক অবদান রেখেছে।
তাই সারাবিশ্ব থেকে প্রচুর সংখ্যক ছাত্রছাত্রী কোরিয়ায় পড়াশোনা করতে আসে। বর্তমানে ১৪৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৯০ হাজার বিদেশী ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। কোরিয়াতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশির সংখ্যাও অনেক, যাদের অধিকাংশই বৃত্তি নিয়ে মাস্টার্স বা পিএইচডি করছেন।
যারা কোরিয়ায় বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে চান তাদের জন্য বৃত্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হল।
বৃত্তির ধরণঃ কোরিয়াতে বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। কোরিয়ান সরকার প্রতিবছর ৬০০ বিদেশী ছাত্রছাত্রীকে মাস্টার্স ও পিএইচডিতে বৃত্তি দিয়ে থাকে। স্যামসাং স্কলারশীপ, পোসকো স্কলারশিপ, ব্রেইন কোরিয়া ২১, কোরিয়া রিসার্চ ফাউন্ডেশন স্কলারশীপ, কোরিয়ান ফাউন্ডেশন স্কলারশীপসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৃত্তি দিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট, কানাডা, ইউরোপের পাশাপাশি এশিয়ার জাপান ও দঃ কোরিয়াতে ও উচ্চশিক্ষার জন্য প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করতে আসছে।
নিচে কয়েকটি স্কলারশিপ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হল। বিস্তারিত ওয়েবসাইট থেকে জেনে নিতে হবে।
কোরিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপঃ কোরিয়ান সরকার প্রতিবছর বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রচুর স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডিতে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর একবার সার্কুলার হয়ে থাকে । নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ওয়েবসাইটগুলোতে চোখ রাখতে হবে।
মাস্টার্স, পিএইচডিতে স্কলারশিপ পেতে হলে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করে আবেদন জমা দিলে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সুবিধাদিঃ বিমান টিকেট, লিভিং কস্ট(৯০০ইউএস ডলার), মেডিকেল ইন্সুরেন্স সহ যাবতীয় সুবিধাদি পাওয়া যায়। তাছাড়া, গবেষনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানতে নিচের ওয়েবসাইটঃ www.niied.go.kr দেখুন।
প্রফেসর ফান্ড স্কলারশিপঃ কোরিয়াতে সবচেয়ে বেশি বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে প্রফেসরের ফান্ড থেকে। মাস্টার্স, পিএইচডি তে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। মুলত মাস্টার্স, পিএইচডির ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সময় প্রফেসরের গবেষনাগারে গবেষণার কাজে সহযোগিতা করতে হয়। প্রফেসররা গবেষনার জন্য বিভিন্ন কোম্পানী, দাতাসংস্থা থেকে অর্থ পেয়ে থাকে । তবে বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অন্তর্ভুক্ত সাবজেক্টেই মূলত স্কলারশিপ পাওয়া যায়।
এই স্কলারশিপের জন্য যা করতে হবেঃ কোরিয়ার প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (ওয়েবসাইটে ইংরেজি ওয়েবসাইটের অপশন পাওয়া যাবে) প্রফেসরদের ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া আছে। সেখান থেকে আপনার সাবজেক্টের যে প্রফেসরকে আপনার ভাল লাগে(প্রফেসরের বায়োডাটা দেওয়া থাকে) তাকে ই-মেইল করতে হবে। রেসপন্স দেখে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে প্রফেসররা কোন পাবলিশট পেপার এবং ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি থাকলে অগ্রাধিকার দেন।
মনে রাখতে হবে কোরিয়াতে ৫০ হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রী প্রফেসরের ফান্ডের মাধ্যমে পড়াশোনা করছেন। এক প্রফেসর রেসপন্স না করলে অন্য প্রফেসরকে ই-মেইল পাঠাতে হবে। প্রফেসরের সাথে স্কলারশিপের যাবতীয় সুবিধাদির কথা ভালভাবে জিজ্ঞেস করে আসতে হবে। কারণ কোরিয়াতে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম করা খুবই কষ্টকর।
বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপঃ প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের ফান্ড থেকে প্রচুর পরিমাণ স্কলারশিপ দিয়ে থাকে।এক্ষেত্রে শুধু টিউশন ফি ছাড় দেওয়া হয়। নিজেদেরকে লিভিং কস্ট নিয়ে আসতে হয় বা এখান থেকে ম্যানেজ করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে বিস্তারিত জানা যাবে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের ঠিকানাঃ
সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিঃ http://www.useoul.edu/
কোরিয়া ইউনিভার্সিটিঃ http://www.korea.edu/
ইয়নসে ইউনিভার্সিটিঃ http://www.yonsei.ac.kr/eng/
খিয়ংহি ইউনিভার্সিটি http://www.khu.ac.kr/eng/index.jsp
ইহোয়া উইমেন্স ইউনিভার্সিটি http://www.ewha.ac.kr/english/
ইনহা ইউনিভার্সিটিঃ http://eng.inha.ac.kr/
পুসান ইউনিভার্সিটি http://english.pusan.ac.kr/html/00_main/
বিঃ দঃ কোরিয়ায় কোন রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো হয়না। নিজেরদেরকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে করতে হয়। ইন্টারনেটে সব ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে। কোরিয়ার সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাই কমবেশি সব বিশ্ববিদ্যালয়ই ভাল।