Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

koumi-madrasahকওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা সনদ দাওরায়ে হাদিসকে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে বিল পাস হয়েছে গত ১৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু এই সনদের স্বীকৃতির ফলে কওমি মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা সরকারি কী কী সুবিধা পাবে বা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে এই সনদ কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে চলেছে আলোচনা।

কওমি মাদরাসার সদন স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ মনে করেন, এই সনদ সরকারি স্বীকৃতি লাভের ফলে দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী শিক্ষিত সমাজ হিসেবে সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পেল। এছাড়া তারা বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। শুধু তাই নয় এখন তারা দেশের রেমিটেন্সেও বিশাল অবদান রাখবে। তাদের নিয়ে এখন সেই পরিকল্পনাই করা হচ্ছে। এছাড়া কওমি মাদরাসায় কারিগরি শিক্ষা চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় একটি চুক্তিও হয়েছে।

chardike-ad

ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, অভিভাবকসহ হিসেব করলে কোটি মানুষ কওমি মাদরাসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারার বাইরে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই স্বীকৃতির ফলে তারা যেমন সমাজের মূল ধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পেল তেমনি দেশও উপকৃত হয়েছে। তবে প্রতি শিক্ষা মাধ্যমে ধাপে ধাপে শেষ করে সর্বোচ্চ শিক্ষা সনদ দেয়া হয়। কিন্তু কওমি শিক্ষায় কেন নিচের স্তরে কোনও সনদের ব্যবস্থা না করে একবারে সর্বোচ্চ সনদের স্বীকৃতি দেয়া হলো?

কওমি মাদরাসার সদনের স্বীকৃতি দাবি আদায়ের আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত মুফতি ফয়জুল্লাহ, তিনি এ বিষয়ে বলেন, এসএসসি, এইচএসসি পর যেমন অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে যায়। তারা সেই সনদ দিয়ে জীবনের প্রয়োজনে কর্মক্ষেত্রে ঢুকে পড়ে। তেমনি যদি অন্যান্য কোনো ধাপে কওমি মাদরাসায় স্বীকৃতি থাকে, আর শিক্ষার্থী ঝরে যায় তাহলে পূর্ণ আলেম হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে অনেকে। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে মুরব্বিরা পরিকল্পনা করবেন।

sadএই স্বীকৃতির ফলে কওমি মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা সরকারি কী কী সযোগ সুবিধা পাবে? সে প্রশ্নটি অনেকেরই। কারণ অনেকেই মনে করেন মূল ধারার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা টিকতে পারবে না। ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, কওমি মাদরাসার ছাত্ররা যোগ্যতায় অন্যান্যদের থেকে এগিয়ে আছে এটি সবাই স্বীকার করে। যে বিষয়ের উপর যার দক্ষতা তাকে সে বিষয়েই প্রতিযোগিতা করতে হবে। যদি কেউ বিজ্ঞান পড়ে আরবিতে প্রতিযোগিতা করতে যায় তাহলে যেমন টিকতে পারবে না, তেমনি আরবি পড়ে বিজ্ঞানের প্রতিযোগিতাও সে টিকতে পারবে না।

কওমি মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতির বিষয়ে যারা এতোদিন আন্দোলন করেছেন তাদের প্রায় সবাই ইসলামি ঐক্যজোটের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের চার দলীয় জোট সরকারের অংশিদারও ইসলামী ঐক্যজোট। কিন্তু সেসময় কেন তারা এই স্বীকৃতি আদায় বা বাস্তবায়ন করতে পারেনি? এ বিষয়ে প্রশ্ন ছিল ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহর কাছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা ও দৃঢ়তা এবং আন্তরিকতার কারণেই এই স্বীকৃতি সম্ভব হয়েছে। এজন্য তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে এর বদলা পাবেন। ২০০৬ সালেও একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি আলেম ওলামারা যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবে হয়নি। সেটি ছিল অসম্পূর্ণ। তিনি বলেন, আসলে কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি যেন না দেয়া হয় সেজন্য একটি মহল সব সময় তৎপর। এই মহলটি সেসময়ও তৎপর ছিল। কিন্তু তখন সফল হয়েছিল আর এখন সফল হয়নি।

তবে অনেক পরে হলেও স্বীকৃতি পেয়ে সন্তুষ্ট মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্ররা। তারা মনে করেন এখন দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর তারাও অংশিদার। মুফতি ইহ্‌তিশামুল হক নোমান বলেন, সাধারণত নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই বেশি কওমি মাদরাসায় লেখাপড়া করে। কিন্তু সরকারি স্বীকৃতির ফলে এখন সব ধরনের পরিবার থেকেই ছাত্র-ছাত্রী বাড়বে।

তবে শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধু্রী মনে করেন, তিনটি কারণে অভিভাবকরা সন্তানদের কওমি মাদরাসায় দিয়ে থাকেন। এক. দারিদ্রতা। অর্থাৎ এই মাধ্যমে লেখা পড়ার কোনও খরচ দিতে হয় না। দুই. অনেকেই মনে করেন সন্তান ধর্মীও ভাবধারায় মানুষ হবে। সেই ইচ্ছা থেকেই অনেকে মাদরাসায় দিয়ে থাকেন। আর তিন নম্বর হচ্ছে, সব ধরনের পরিবারেই দেখা যায় তারা বলে থাকেন যে, আমার তিনটি সন্তান থাকলে অন্তত একটি সন্তানকে মাদরাসায় পড়াবো। মাদরাসায় লেখাপড়ার পেছনে পরিবারের এসব মানসিকতার প্রামাণ পাওয়া যায়।

বেফাকুল মাদারিসিন আরাবিয়া বা বেফাক। যা কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডও নামে পরিচিত। তাদের তথ্য মতে ২০১৩ সালে তাদের শিক্ষার্থী ছিল ৫৫ হাজার। ২০১৪ সালে ৬৩ হাজার, ২০১৫ সালে ৭৪ হাজার, ২০১৬ সালে ৮৬ হাজার, ২০১৭ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ও২০১৮ সালে ১ লাখ ২১ হাজার। অর্থাৎ গত ৬ বছরে এই মাধ্যমে ছাত্র বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।

এছাড়া আরও পাঁচটি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। যেখানে আরও কয়েক লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর সবশেষ ২০১৫ সালের জরিপ তথ্য মতে দেশে কওমি মাদরাসা আছে ১৩ হাজার ৯০২টি। যার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। তবে বেসরকারি হিসেব মতে দেশে কওমি মাদরাসার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি।