বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য দেশে বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। প্রবাসীদের জন্য ‘ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড’ নামে একটি বন্ড চালু আছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ বন্ডে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন প্রবাসীরা। মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১২ শতাংশ।
প্রতি ছয় মাস অন্তর মুনাফা তুলতে পারবেন। যদি ছয় মাসে মুনাফা না তোলেন তবে পাঁচ বছর শেষে মূল অংকের সঙ্গে ছয় মাসভিত্তিতে ১২ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা পাবেন।
জানা গেছে, ব্যাংক আমানতে সুদহারের চেয়ে মুনাফা বেশি ও নিরাপদ হওয়ায় বন্ডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন প্রবাসীরা। ইতিমধ্যে এ খাতে তাদের বিনিয়োগ ১০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
এতে সর্বনিম্ন সাড়ে ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া খাতটিকে করের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। বিশেষত ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে সুদহার ১২ শতাংশ হওয়ায় বিনিয়োগে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এটি প্রবাসীদের বন্ডে মোট বিনিয়োগের প্রায় ৯৯ শতাংশ দখলে রেখেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের অধীনে প্রবাসীদের জন্য তিন ধরনের বন্ড চালু রয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকও বিভিন্ন নীতি সহায়তা দিয়ে থাকে। এগুলো হল- ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ইনভেস্টমেন্ট ডলার বন্ড ও ইউএস প্রিমিয়ার বন্ড।
এর মধ্যে ইউএস ইনভেস্টমেন্ট ডলার বন্ড ও ইউএস প্রিমিয়ার বন্ড দুটি বৈদেশিক মুদ্রায় ক্রয় করতে হয়। আর ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড বৈদেশিক মুদ্রা থেকে টাকায় রূপান্তর করে ক্রয় করতে হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীদের জন্য তিন ধরনের বন্ড চালু করা হয়েছে। এছাড়া স্বল্প খরচে রেমিটেন্স পাঠানোর নানা উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি তা সহজে প্রাপকের হাতে তুলে দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যাংক ওয়েজ আর্নার ডেস্কও চালু করেছে। এর বাইরে সরকার বিভিন্ন সময় প্রবাসীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তিন ধরনের বন্ডে ৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন প্রবাসীরা। এর মধ্যে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে সর্বোচ্চ এবং রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ ৯ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা, ইউএস ইনভেস্টমেন্ট ডলার বন্ডে ২৮৮ কোটি টাকা এবং ইউএস প্রিমিয়ার বন্ডে বিনিয়োগ করেছে ২৮০ কোটি টাকা।
তথ্যে আরও দেখা যায়, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা যাবে। করমুক্ত এ বন্ডে সুদের হার ১২ শতাংশ। চক্রবৃদ্ধিহারে এ সুদ ছয় মাস অন্তর যোগ হবে। এছাড়া ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডে তিন বছরের জন্য বিনিয়োগ করা যাবে। করমুক্ত এ বন্ডে সুদের হার সাড়ে ৭ শতাংশ এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্টেও তিন বছরের জন্য বিনিয়োগ করা যাবে। তবে করমুক্ত এ বন্ডে সুদের হার সাড়ে ৬ শতাংশ।
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড: ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের যাত্রা ১৯৮১ সালে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ বন্ডে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। মেয়াদ শেষে মুনাফা ১২ শতাংশ।
প্রতি ছয় মাস অন্তর মুনাফা তোলা যায়। কেউ যদি ছয় মাসে মুনাফা না তোলে তবে মেয়াদপূর্তিতে মূল অঙ্কের সঙ্গে ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে ১২ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা প্রদান করা হবে। এ বন্ডে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অন্যতম হচ্ছে- মৃত্যুঝুঁকি ও সিআইপি সুবিধা। আট কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করলে সিআইপি সুবিধা পাওয়া যাবে।
ইউএস প্রিমিয়ার বন্ড: ইউএস প্রিমিয়ার বন্ড প্রবর্তন হয় ২০০২ সালে। তিন বছর মেয়াদি এ বন্ডে সর্বনিম্ন ৫০০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। মেয়াদ শেষে মুনাফা সাড়ে ৭ শতাংশ।
প্রতি ছয় মাস অন্তর সরল সুদে মুনাফা তোলা যায়। তবে মেয়াদপূর্তির আগে বন্ড ভাঙতে চাইলে ১ থেকে দেড় শতাংশ সুদ কমে যাবে। এছাড়া এ বন্ডের ক্ষেত্রেও মৃত্যুঝুঁকি ও সিআইপি সুবিধা পাওয়া যাবে।
ইউএস ইনভেস্টমেন্ট ডলার বন্ড: ইউএস ইনভেস্টমেন্ট ডলার বন্ডের প্রবর্তন ২০০২ সালে। তিন বছর মেয়াদি এ বন্ডে সর্বনিম্ন ৫০০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। মেয়াদ শেষে মুনাফা সাড়ে ৬ শতাংশ।
প্রতি ছয় মাস অন্তর মুনাফা তোলা যায়। কেউ যদি মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করতে চায় ১ থেকে দেড় শতাংশ সুদ কমে যাবে। এছাড়া অন্যান্য বন্ডের মতো এখানেও মৃত্যুঝুঁকি ও সিআইপি সুবিধা পাওয়া যাবে।