নতুন বোলিং সেনসেশন মোহাম্মদ আব্বাসের অসাধারণ বোলিংয়ে একদিন হাতে রেখেই দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৩৭৩ রানে হারিয়ে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে পাকিস্তান। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯৫ রানে ১০ উইকেট নিয়েছেন আব্বাস।
আবুধাবীতে আজ শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) ১ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তরুণ পাকিস্তানি সিমার আব্বাসের সুইংয়ে শুরু থেকে ধুঁকতে থাকে অজি ব্যাটসম্যানরা।
৫৩৮ রানের অসম্ভব লক্ষ্যে খেলতে নামা অজিরা লাঞ্চের পরই মাত্র ১৬৪ রানেই গুটিয়ে গেছে। প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ বাঁচানো ওপেনার উসমান খাজা ইনজুরির কারণে ব্যাটিংয়ে নামতে না পারা অজিদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে। ফলে ৯ উইকেট হারিয়েই হার মানতে বাধ্য হয় অজিরা।
স্লো-টার্নিং পিচে বল হাতে সুইংয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন পাকিস্তানি বোলার আব্বাস। চতুর্থ দিনের প্রথমভাগেই টপ অর্ডারের ৪ উইকেট তুলে নিয়ে অজিদের ইনিংসে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেন এই তরুণ সিমার। অজিদের হয়ে ম্যাচে সর্বোচ্চ রান করা লাবুসানেকে (৪৩) লাঞ্চের পরই কট বিহাইন্ড করে আউট করে দেন আব্বাস।
লাবুসানের উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট পাওয়া হয়ে যায় আব্বাসের। প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট পেতে ৬২ রান খরচ করেছেন এই সিমার।
এদিকে ৪৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে অজি ব্যাটিং অর্ডারের টেল-এন্ডারদের তুলে নেন লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ। ইনিংসের শেষ উইকেটটিও তার। ৩ রান করা জন হল্যান্ডকে স্লিপে ক্যাচ পাঠাতে বাধ্য করে ম্যাচে জয়ের মুহূর্ত এনে দেন এই লেগ স্পিনার।
চতুর্থ দিনের শুরুটা অবশ্য ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলো। কারণ দুই ব্যাটসম্যান ট্রাফিস হেড (৩৬) ও অ্যারন ফিঞ্চ (৩১) দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬১ রান তুলেছিলেন। কিন্তু এরপরই আব্বাসের অবিশ্বাস্য সিম আর সুইংয়ের প্রদর্শনীর শুরু।
আব্বাসের সুইংয়ে পরাস্ত হেডের ব্যাটের কানায় লেগে বল বদলি উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে ঠাই নিলে দ্বিতীয় উইকেট জুটির সমাপ্তি ঘটে। দিনের শুরুতে মাথায় যন্ত্রণার কারণে মাঠে নামতে পারেন নি নিয়মিত উইকেটরক্ষক ও অধিনায়ক সরফরাজ। পরে তাকে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে। ম্যাচের তৃতীয় দিন ব্যাটিং করার সময় সরফরাজের হেলমেটে বলের আঘাত লাগে। পরে জানান হয়, মাথায় আঘাত পেয়েছেন তিনি।
হেডের বিদায়ের পর মিচেল মার্শকেও (৫) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন আব্বাস। এদিকে আব্বাসের সুইং সামাল দিতে ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে ব্যাট করার চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা খান আসাদ শফিক। তাকে ঠেকাতে স্ট্যাম্প ঘেঁষে দাঁড়ান রিজওয়ান। এই সিদ্ধান্ত দারুণ কাজে লাগে। বাধ্য হয়ে ক্রিজের ভেতরে দাঁড়িয়ে ব্যাট করেন ফিঞ্চ আর তাকে এলবিডব্লু’র ফাঁদে ফেলেন আব্বাস।
দুই বল পর অজি অধিনায়ক পেইন শুন্য রানেই বিদায় নেন। আব্বাসের সুইং বুঝতে না পেরে বল ছেড়ে দেন পেইন, কিন্তু বল তার ব্যাটের কানায় লেগে অফ স্ট্যাম্প আঘাত হানে।
এরপর মিচেল স্টার্ক (২৮) ও পিটার সিডল (৩) দুজনকেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আউট করেন ইয়াসির শাহ। শেষদিকে লাবুসানে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে স্টার্কের সঙ্গে ৬৮ রানের জুটি গড়েছিলেন বটে, কিন্তু তা ম্যাচ জেতানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না কোনোভাবেই। লাঞ্চের পর বোলিংয়ে এসেই শর্ট-পিচ ডেলিভারিতে তাকে কট বিহাইন্ড করে বিদায় করে দেন আব্বাস।
এই জয়ে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিলো পাকিস্তান। ম্যাচসেরা হয়েছেন প্রথমবারের মতো টেস্টে ১০ উইকেটের স্বাদ পাওয়া মোহাম্মদ আব্বাস।