তুমুল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের পরও খেলার নির্ধারিত সময় শেষে যখন স্কোরবোর্ড খালি, তখন অনেকেই হয়তো হিসাবের ইতি টানতে শুরু করছিলেন- ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ম্যাচ গোলশূন্য ড্র, এমন কিছু দিয়ে। কিন্তু আর্জেন্টিনার হয়ে লিওনেল মেসি মাঠে না থাকতে পারেন, ব্রাজিলের হয়ে তো আছেন নেইমার! তাহলে শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্তও কি কিছু আন্দাজ করা ঠিক? ঠিক নয়।
নেইমার সেটাই যেন বোঝালেন। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে কর্নার কিক থেকে তার বাড়িয়ে দেওয়া বলই দুর্দান্ত হেডে আর্জেন্টিনার জালে জড়িয়ে দিলেন মিরান্ডা। সাম্বার দেশের সমর্থকরা মেতে উঠলো বিজয়োল্লাসে। ফুটবলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের মধ্যে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে এই গোলের সুবাদেই জয় তুলে নিলো তিতের শিষ্যরা।
সৌদি আরবের বাদশাহ আব্দুল্লাহ স্পোর্টস সিটিতে প্রীতি ম্যাচে নামলেও দুই দলের অতীতের দ্বৈরথ উত্তাপেরই জানান দিচ্ছিলো। সেজন্য গ্যালারিতেও ছিল স্থানীয় ও বিদেশি ফুটবলপ্রেমীদের ভিড়।
খেলা শুরুর ৮ মিনিটেই প্রথম সুযোগ পেয়ে যায় মেসি ছাড়া খেলতে নামা আর্জেন্টিনা। নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর কাছ থেকে বল পেয়ে শট নেন পিএসজি তারকা জিওভানি লো সেলসো। কিন্তু সেটা গোলবারের পাশ দিয়ে চলে যায়।
তার ২০ মিনিটের মধ্যেই দারুণ সুযোগ আসে নেইমারদের সামনে। পিএসজি তারকা নেইমার ফ্রি কিক নিলে সেটা ক্লিয়ার করে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ। কিন্তু কাসেমিরো আবার জালে জড়াতে চাইলে বক্সের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি তারকা নিকোলাস ওতামেন্ডি অনেকটা মাথা-বুক একসঙ্গে পেতে দিয়ে রক্ষা করেন আর্জেন্টিনা।
সৌদি আরবের আবহাওয়ার গরমে দু’পক্ষের খেলোয়াড়দেরই তখন হাসফাঁস দশা। রেফারি তাই ৩০ মিনিটের মাথায়ই পানীয় পানের সুযোগ করে দেন।
এরপর খেলা শুরু হতেই আবার সামনে সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার। ব্রাজিলের ফাউলের সুবাদে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। জুভেন্টাসের ‘নাম্বার টেন’ পাওলো দিবালার সেই কিক গোলপোস্টের একেবারে পাশ দিয়ে চলে যায়।
৪০ মিনিটের মাথায় প্রায় আর্জেন্টিনার রক্ষণভেঙে ঢুকে পড়তে থাকা নেইমারকে থামিয়ে দেন সেই ওতামেন্ডি। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তেও আর্জেন্টিনা-শিবিরে কাঁপন ধরিয়েছিলেন নেইমার।
দ্বিতীয়ার্ধে গোল পেতে দু’পক্ষ আক্রমণে শান দেয়। আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে তুলনামূলকভাবে ভালো খেলতে থাকা দিবালাকে উঠিয়ে ৫৮ মিনিটের মাথায় ইন্টার মিলানের তারকা লাওতারো মার্তিনেজকে নামান অন্তর্বর্তী কোচ লিওনেল স্কালোনি।
৬০ মিনিটের মাথায় আক্রমণে ওঠে আর্জেন্টিনা। পারাদেসের লম্বা শট অবশ্য লক্ষভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটে সেলসোকে হতাশ করেন মারকুইনহোস।
গত বিশ্বকাপে আলোচনায় থেকেও পুরো ফ্লপ হওয়া জেসুসকে তিতে উঠিয়ে নেন ৬৫ মিনিটের মাথায়। তার বদলে নামান রিচার্লিসনকে। এরমধ্যে অবশ্য আর্জেন্টিনার বক্সে ঢুকেও গোল দিতে না পারা নেইমার প্রতিপক্ষের পারাদেসকে ফাউল করে হলুদ কার্ড হজম করেন।
৭০ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে নেইমার বল বাড়িয়ে দেন বক্সের মাঝে। বার্সেলোনার তারকা ম্যালকম আর্থার ক্ষিপ্রগতির শটও নিয়েছিলেন, কিন্তু ২০১৪ বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক রোমেরো সেটা দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন। তার এই ‘ফর্ম’ গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দল থেকে ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়ার দুঃখকেই যেন উসকে দিলো।
৭৭ মিনিটের মাথায় নেইমারের আরেকটি ফ্রি কিক গোলপোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। এই অবস্থায় সবাই যখন গোলশূন্য ড্র ম্যাচের হিসাব কষছিলেন, তখনই পার্থক্য গড়ে দেন মিরান্ডা, নেইমারের বাড়ানো বল পেয়ে। অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটের খেলার সময় নেইমার কর্নার নিলে পোস্টের পাশেই দাঁড়ানো মিরান্ডা দারুণ হেডে সেই বল জালে জড়িয়ে দেন। ব্যস, ফলাফল এটাই শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায়।
পুরো ম্যাচে ফাউল হয়েছে প্রচুর। যেজন্য হলুদ কার্ডই খেয়েছেন ৭ জন খেলোয়াড়। তবে গোল না পেলেও দারুণ খেলে দর্শকের মন জয় করেছেন নেইমার। অন্যদিকে, দিবালা তার খেলা সময়ে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা দেখালেও নিষ্প্রভ দেখা গেছে মাউরো ইকার্দিকে, অথচ ব্রাজিলের সঙ্গে নামার আগে মন্তব্য করে উত্তাপ ছড়িয়েছিলেন তিনিই।