জেসি উইনগার্ড। বাড়ি অস্ট্রেলিয়ায়। পেশায় সাংবাদিক। এজন্য বেশিরভাগ সময় বনবাসে থাকতে হয় তাকে! জার্মান রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের সংবাদকর্মী তিনি। প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় জার্মানির বনে। তাই তার বাসও বনেই!
প্রথমবার ঢাকা ঘুরে গেলেন জেসি। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ দিনের কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। বিষয় ছিল— সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেক নিউজ, ভেরিফিকেশন ও কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট। যৌথভাবে এর আয়োজন করে ডয়েচে ভেলে ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি।
ঢাকায় গুলশানের একটি হোটেলে উঠেছিলেন জেসি। তেজগাঁওয়ে প্রতিদিন কর্মশালা শেষে হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে কাছের রেস্তোরাঁয় খেতে যেতেন। বেশিরভাগ সময় চিকেন আইটেম খেয়েছেন তিনি। এছাড়া নান, গারলিক নান, বাটার নান, কখনওবা বিরিয়ানির স্বাদ নিয়েছেন। ফুটপাত থেকে সেদ্ধ ডিম কিনেও খেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খাইয়েছেন।
কর্মশালায় প্রতিদিনই দুপুরে হাত দিয়েই খেয়েছেন জেসি। যদিও চামচ দিয়ে খাওয়া তার অভ্যেস। তিনি বললেন, ‘এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। কিছুটা ঝাল চিকেন খিচুড়ি খুব উপভোগ করেছি। এখানকার খাবার বেশ সুস্বাদু। এই দেশটা খুব ভালো লেগেছে।’
শুক্রবার (১২ অক্টোবর) ছিল কর্মশালার সমাপনী দিন। এর পরদিন সকাল ৯টায় হোটেল থেকে বেরিয়েছেন জেসি। প্রথমে তিনি যান হাতিরঝিলে। সেখানে নৌকায় চড়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি।
এরপর চারুকলা হয়ে জেসি যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। টিএসসির সামনে থেকে বেলপুরি খেয়েছেন ইচ্ছেমতো। এই খাবারের স্বাদ কখনও ভুলবেন না বলে অনুভূতিতে জানালেন।
ঢাবিতে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ জেসির রিকশায় চড়ার ইচ্ছে হলো। তার সঙ্গে থাকা চট্টগ্রামের ইন্টারপ্রিটার রোমানা আক্তার শান্তা ঢাবি পুকুর থেকে কার্জন হল পর্যন্ত একটি রিকশা ভাড়া করেন।
কিছুদূর যাওয়ার পর জেসি নিজেই বসে যান চালকের আসনে! শান্তাকে যাত্রীর আসনে বসে ভালোই চালাচ্ছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, জেসি ভেবেছিলেন গাড়ির মতো ব্রেক পাবেন প্যাডেলে। কিন্তু রিকশার ব্রেক হাতে থাকে তার জানাই ছিল না।
অবশ্য ঢাকায় কর্মশালার প্রথম দিনেই রাতে গুলশানে প্রথমবার রিকশায় চড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে জেসির। তবে শনিবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকার কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরেছেন। এর মধ্যে ঢাবি ছাড়াও ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, লালবাগ কেল্লা ও শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেট।
চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, কর্মশালার শেষ দিন শাড়ি পরেন জেসি। এজন্য আগেভাগে আড়ং থেকে কিনে রেখেছিলেন। চুলে ছিল ফুল। হাতে চুড়ি। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন বাক্সভর্তি টিপ আর বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাহন রিকশার শোপিস। আড়ং থেকে সালোয়ার-কামিজ কিনেও পরেছেন এই বিদেশিনী সাংবাদিক।
রবিবার ঢাকা ছেড়েছেন জেসি। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, এই শহরের ঘ্রাণ, সুর, আকর্ষণ সবই এককথায় চমৎকার। আমার দেখা বন্ধুভাবাপন্ন শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না!’