কখনো সূর্যের আলো উঁকি মারে ঘরের ভেতর, আবার কখনো বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে কুলছুমার ভাঙা ঘরে। একসময় স্বামী-সংসার নিয়ে সুখে দিন কাটলেও বর্তমানে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তার। চার সন্তানের এ জননী দরিদ্রতার কারণে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকেও দত্তক দিয়েছেন। আর সবই ঘটেছে দরিদ্রতার অভিশাপে। অভাগা এই নারী ও তার সন্তানদের নিয়ে লিখেছেন রিফাত কান্তি সেন-
স্বপ্ন ভাঙার গল্প: স্বপ্ন কখনো মানুষকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যায়, আবার কখনো কখনো স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়ে অভিশাপে রূপ নেয়। ভাগ্য মানুষকে কখন কোথায় নিয়ে যায়, সেটা খুব কম মানুষই জানে। আর আগে থেকে বলাও যায় না, কে কখন রাজা আর কখন ফকির হবে। গল্পটা এক অভাগা নারীর। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন এবং স্পর্শকাতর সম্পর্ক হচ্ছে মাতৃত্ব। সে সম্পর্কেও ফাটল ধরালো শুধুই অভাব। অভাবের তাড়নায় মাত্র ৫ দিনের সন্তানের মাতৃত্বের সম্পর্ক ছেদ করে দত্তক দিতে হয়েছে তাকে।
বন্ধন: নারী হয়ে জন্মে স্বামীর ঘরে যেতে হয়। আর তাই স্বামী দ্বীন ইসলামের সংসারে পা রাখেন কুলছুমা। তার বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার ইশানবালার চরে। সেখান থেকে স্বামীর হাত ধরে বর্তমানে চাঁদপুর কাঁচাকলনীর ছোট্ট একটি ঘরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। চোখে নানা স্বপ্ন থাকলেও দরিদ্রতার কারণে সব স্বপ্ন যেন ফিকে হতে থাকে।
সংসার: অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সংসার জীবনে দুঃস্বপ্নে রাত কাটে কুলছুমার। স্বামী রিকশা চালিয়ে কোনো রকম আয় করেন। তা দিয়ে টানাটানি চলে সংসারে। কখনো দু’বেলা আবার কখনো একবেলা, খেয়ে না খেয়েই চলছে তাদের জীবন। যে টাকা উপার্জন হয় তাতে চার সন্তান নিয়ে বসবাস করা বড়ই কষ্টসাধ্য।
সন্তান: কুলছুমা বেগমের ৪ সন্তান। চারজনই কন্যা। যেখানে নিজেদের পেট চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে চার সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। তাদের বড় মেয়ে ইয়াছমিন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। মেজ মেয়ে লাবনী তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সেজ মেয়ে কাকলী এখনো স্কুলের যাওয়ার উপযুক্ত হয়নি। গত সপ্তাহেও এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন কুলছুমা। তাদের ভরণ-পোষণ দিতে অপারগ হওয়ায় মাত্র ৫ দিনের শিশুকে দত্তক দিতে হয়। বিনিময়ে ওষুধ আর হাসপাতালের সিজার বিল মেটানোর জন্য কিছু টাকা পান তারা।
ঋণের বোঝা: দ্বীন ইসলাম একসময় জেলে ছিলেন। মাছ ধরার জন্য ছোট একটি নৌকাও কেনেন। সেজন্য ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিতে হয় স্থানীয় আশা সমিতি থেকে। মাত্র ৮ কিস্তি পরিশোধ করতে না করতেই কুলছুমাদের মাছ ধরার নৌকাটি চুরি হয়ে যায়। সংসারের অভাব আর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে।
মেয়েদের স্বপ্ন: স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়ে ইয়াছমিন আর লাবনী অভাবের সংসারে পড়াশোনা করে বড় হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। কিন্তু দরিদ্র বাবা-মার পক্ষে কি সম্ভব তাদের উচ্চশিক্ষিত করা? ওদের স্বপ্ন- শুধু তারা দু’জন নয়, বাকিরাও লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হতে চায়। এ জন্য উচ্চবিত্ত এবং প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করে।