ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করে অজ্ঞান করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে অভিযুক্তরা তাকে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। বুধবার দিবাগত রাতে হলের গেস্টরুমে (ছাত্রনেতাদের বিচারালয়) এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর মারধরকারী হল শাখা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ ও ইসলামিক স্টাডিজ ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী সাইদুল ইসলাম। তারা দু’জনই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারী বলে জানা যায়। আসাদও ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী এবং গোলাম রাব্বানীর অনুসারী।
হল সূত্র জানায়, বুধবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে উপলক্ষে করে কর্মসূচী পালন করে ছাত্রলীগ। বোনের শশুর অসুস্থ্য থাকায় আসাদ তাকে দেখতে যাওয়ার জন্য হলের কথিত বড়ভাইদের কাছে ছুটি প্রার্থনা করে। কিন্তু তাকে ছুটি না দিয়ে উল্টো ধমক দেয় এবং গেস্টরুমে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় ছাত্রলীগ কর্মী হৃদয় আহমেদ ও সাইদুল ইসলাম।
সারাদিন কর্মসূচী পালন করার পর বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় হলের নিচতলার গেস্টরুমে আসাদকে ডাকেন অভিযুক্ত হৃদয় ও সাইদুল। এসময় হৃদয় আগেরদিন (মঙ্গলবার) গেস্টরুমে না থাকার অজুহাতে প্রথমে আসাদের পেটে ও কোমরে লাথি মারেন এবং অন্য ইয়ারমেটদের লোহার রড ও স্টাম্প নিয়ে আসতে বলেন। হৃদয়ের মারধরে আসাদ নিচে পড়ে যায়, এরপর অভিযুক্ত সাইদুল তার মাথায়, মুখে ও হাতে ঘুষি মারতে থাকেন। বেধড়ক পিটুনিতে মারাত্মক আহত হয়ে পড়লে তাকে হলের মাঠে নিয়ে আসেন অভিযুক্ত হৃদয় ও আসাদ।
পরে মাঠে আসাদ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে সে অবস্থায় মাঠে রেখে পালিয়ে যায় হৃদয় ও সাইদুল । পরে রাত দু’টায় আসাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় তার বন্ধুরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ শুক্রবার রাতে জানান, পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা ও টেনশনের কারণে আমি মঙ্গলবার গেস্টরুমে আসতে পারিনি। বুধবার প্রোগ্রামে গেলে তারা আমাকে আগেরদিন গেস্টরুমে না আসার কারণ জিজ্ঞেস করে এবং রাতে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। বুধবার রাতে তারা আমাকে গেস্টরুমে ডাকে এবং আমার বাবা-মা নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে। পরে হৃদয় ও সাইদুল আমাকে গেস্টরুমে বেপরোয়াভাবে লাথি মারে আমার মুখ, ঘাড়ে ও মাথায় কিল ঘুষি দেয়। পরে আমাকে হলের মাঠে নিয়ে আসলে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরীকভাবে নির্যাতনের বিষয়ে বিচার চেয়ে হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি মারধরকারীদের ভয়ে হলের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় থাকছেন। আর অভিযুক্ত হৃদয় ও সাইদুল থাকছেন হলেই।
এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে কল দিলেও তিনি কল ধরেননি।
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ. জে এম শফিউল আলম ভূইয়া এ বিষয়ে বলেন, ওই শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অপরাধকারীদের কোন মাফ নাই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, বিষয়টি আমি অবহিত আছি। হল প্রশাসনের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।