ডিম কেক, বেগুনি, সবজির চপ, পেঁয়াজু, ছোলা বুট দারুণ খাদ্যসামগ্রী। খেতেও খুব সুস্বাদু! মজার মজার এসব ঝাল খাবার তৈরি করে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। যা বদলে দিয়েছে তার ভাগ্য। ঘুরে দাঁড়িয়েছেন নতুনভাবে। পাকা ঘর করেছেন। কিনেছেন তিনটি মোটরসাইকেল। বলছিলাম জসিম উদ্দিন নামের এক তরুণের গল্প। উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর শহরের খানিকটা দূরে মিয়ারবেড়ী বাজারে গেলেই দেখা মিলবে জসিমের ভ্রাম্যমাণ ঝাল বিতান। সব বয়সী মানুষ ভিড় জমায় তার কাছে।
জসিমের জন্ম লক্ষ্মীপুর সদরের ভবানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুরে। বাবার নাম নুরুল আমিন। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল। বলতে গেলে একদম পিছিয়ে পড়া জনপদ। যেখানে ক্ষুধা নিবারণ সবচেয়ে বড় দায়। পড়ালেখার চিন্তা যেন অপরাধ ছাড়া কিছু নয়! ঠিক তেমনটিই ঘটেছে জসিমের বেলায়। দরিদ্র পরিবারে অভাব-অনটনের মাঝে জন্ম বলে ছোটবেলা থেকে পড়ালেখা ভাগ্যে জোটেনি। সংসার চালানোর ভার তার কাঁধে।
এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিনগুলো। কোনোমতে চলছে সংসার। এরই মাঝে বেঁধেছেন নতুন সংসার। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়। মা-বাবার সংসারের হাল ধরেন অন্যরা। তবে সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। নতুন সংসার, খরচ বেড়েছে। তখন ভাবতে থাকেন, কী করা যায়? তেমন জমি-জমাও নেই। মাথায় আসে হোটেলে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা। অল্প পুঁজি শুরু করেন অস্থায়ী ঝাল বিতান। ৪-৫শ’ টাকা খরচ করলে দৈনিক ১ হাজার থেকে দেড়হাজার টাকা বিক্রি করতে পারেন।
আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে সফল হয়ে উঠেছেন জসিম। তার ঝাল খাবারের জনপ্রিয়তার কথা জানালেন জহিরুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, ‘কম টাকায় ভালো জিনিস কে না চায়? আমি নিয়মিত জসিমের কাস্টমার। তার বুট, বেগুনি, চপ, ডিম কেক আমি বেশ পছন্দ করি।’
সফলতা সম্পর্কে জসিম জানান, এসব বিক্রি করেই তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। স্ত্রীকে সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছেন। তিনি জামা-কাপড় বানান। স্ত্রীকে সকালে সহযোগিতা করেন জসিম। বিকেলে ঝাল বিতানের কাজে যান। দুই মেয়ের মধ্যে জুমা আক্তার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে আর প্রিয়াঙ্কা এখনো ছোট।
হাসিমুখে জসিম জানান, এ কাজ করে তিনি বাড়িতে বিল্ডিং করেছেন। তিনটি মোটরসাইকেলও কিনেছেন। একটি তিনি চালান। বাকি দুইটি ভাড়া দেন। সবদিক থেকে তিনি এখন স্বাবলম্বী। তার কাছে লজ্জার কিছু নেই। কারণ কষ্ট করলে ফল একদিন না একদিন পাবেন।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন সম্পর্কে জসিম জানান, সন্তানদের মানুষ করাটা তার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। তবে সবার মতোই নিজের জীবনটা পার করে দিতে চান তিনি।
লেখক- জুনাইদ আল হাবিব, সৌজন্যে- জাগো নিউজ