কানাডায় লোক পাঠানোর নামে এক তরুণীর বিরুদ্ধে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মনিকা আক্তার নামের ওই তরুণী কানাডার জাল ভিসা ও কাগজপত্র তৈরি করে সৌদি প্রবাসী এক তরুণের কাছ থেকে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নিজের জমানো ও শেষ সম্বল হিসেবে ঢাকার বসিলার একখণ্ড জমি বিক্রি করে সেই টাকা দেওয়ার পর এখন নিঃস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে মামুন-উর-রশিদ নামের ওই তরুণের। এ ঘটনায় তিনি রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা (নম্বর ৫০) দায়ের করেছেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর খন্দকার আবু নাঈম বলেন, ‘দুই ভাইবোনের এ চক্রটি লোকজনকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে। আদালতের নির্দেশনা নিয়ে তাদের সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা বর্তমানে জামিনে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, তারা একটি সংঘবদ্ধচক্র। মামলার এক নম্বর আসামি ইমরান সোনার দেশের বাইরে আছে। তাকে শনাক্ত করার জন্য প্রক্রিয়া চলছে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মনিকা আক্তার বিদেশে লোক পাঠানোর নামে একটি প্রতারকচক্র গড়ে তুলেছে। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে তার সৌদি প্রবাসী ভাই ইমরান সোনার। এ ছাড়া ঢাকায় তার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মূলত সৌদি আরব থেকে ইমরান এবং ঢাকার সহযোগীরা তাকে বিদেশ গমনেচ্ছু লোকজনের সন্ধান দেয়। মনিকা নিজের প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিলেও কোনও গ্রাহককে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে যায় না। পল্টন এলাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে বসে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেয়। এমনকি ঘন ঘন বাসাও পাল্টিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় মনিকা।
প্রতারণার শিকার মামুন-উর-রশিদ জানান, তিনি সৌদি আরবে চাকরি করতেন। এর সুবাদে ইমরান সোনার নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ইমরান তাকে তার বোন ঢাকাস্থ কানাডিয়ান দূতাবাসে চাকরি করে বলে জানায়। ইমরান মামুনকে সৌদি আরব থেকে কানাডায় যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। এই প্রলোভনে পা দিয়ে সৌদি আরব থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন মামুন।
মামুন আরও জানান, ইমরানের কথামতো ঢাকায় এসে তার বোন মনিকা আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। মনিকা তাকে পল্টন এলাকায় অফিস আছে জানিয়ে ডেকে নিলেও একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করে। মনিকা তাকে কানাডর ভিসা করিয়ে দেওয়াসহ পাঁচ বছরের ওয়ার্ক পারমিট করিয়ে দেবে বলেও জানায়। মনিকা প্রথমে তার কাছ থেকে পাসপোর্ট (নম্বর বিকিউ ৮৬৩৮০০) নেয় এবং পরবর্তী সময়ে দ্রুত তাকে টাকা দিতে বলে।
মামুন জানান, গত বছরের নভেম্বরে মনিকা তাকে জানায় কানাডা যাওয়ার জন্য তার সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। এখন শুধু টাকা জমা দিলেই ভিসাসহ পাসপোর্ট তার হাতে দেওয়া হবে। মনিকার কথামতো মামুন গত বছরের ৮ নভেম্বর পল্টন টাওয়ারের সামনে প্রথমে নগদ ১০ লাখ টাকা দেন। এরপর ১২ নভেম্বর মামুন তার মামা শফিউল্লাহর ইসলামী ব্যাংকের পল্টন শাখা থেকে মনিকা আক্তারের ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখার অ্যাকাউন্টে (নম্বর ২০৫০১১২০২০৪৫০১৭) ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন। এ ছাড়া, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মনিকা আক্তারের ইসলামী ব্যাংকের পান্থপথ শাখায় অপর একটি অ্যাকাউন্টে (নম্বর ২০৫০২৯০০৯৯১৫) ১০ লাখ টাকা টাকা জমা দেন।
টাকা হাতে পাওয়ার পর মনিকা তাকে ২২ জানুয়ারি ভিসা ও ফ্লাইট হবে বলে জানায়। কিন্তু নির্দিষ্ট তারিখে ভিসা ও ফ্লাইট না হলে মামুন মনিকার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে টালবাহানা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে মনিকাকে ভিসা ও পাসপোর্টের জন্য চাপ দিলে সে ভিসা সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র দেয়। কিন্তু মামুন ঢাকার কানাডিয়ান দূতাবাসে গিয়ে জানতে পারেন, মনিকা যেসব কাগজপত্র দিয়েছে তার সবকিছুই জালিয়াতি করে তৈরি করা।
মামুন জানান, শুরু থেকেই তারা ভাইবোন মিলে পরিকল্পনা করে তার সঙ্গে যে প্রতারণা করেছে এবং ভুয়া কাগজপত্র দিয়েছে তা তিনি বুঝতে পারেননি। যতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন ততক্ষণে মনিকা আত্মগোপনে চলে গিয়েছে। মামুন বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৭-৮ বছর সৌদি আরবে থেকে তিনি টাকা জমিয়ে ঢাকার বসিলায় দেড় কাঠা জমি কিনেছিলেন। কানাডায় যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে সেই জমি কম দামে বিক্রি করে মনিকার হাতে টাকা তুলে দেন। এ ছাড়া, নিজের কাছে জমানো টাকা এবং ধারদেনা করে মোট ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। প্রতারণার শিকার হয়ে এখন তাকে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।
মামুনের অভিযোগ, মনিকা ও তার ভাই ইমরান সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। প্রথমদিকে তিনি টাকা ফেরত চাইলে মনিকা তাকে উল্টো ইভটিজিংয়ের মামলা করার হুমকি দেয়।
জানা গেছে, ইমরান ও মনিকার বাবার নাম মনসুর আলী (মৃত)। গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানাধীন দুই নম্বর ওয়ার্ডের ধারগুণ এলাকায়।
সৌজন্যে- বাংলা ট্রিবিউন