গত জুলাই মাসে কোরিয়ায় সর্বনিন্ম মজুরী ঘন্টায় ৮,৩৫০ উওন করা হয়েছে। আগামী বছর জানুয়ারী থেকে এরপর থেকে এখন পর্যন্ত অনেক সংগঠন এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি চালিয়ে আসছে এবং এই একটি কারণে প্রেসিডেন্টের এপ্রোভাল রেট ৫০ শতাংশের কমে নেমে গেছে। আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতেও এটা এখন একটা বড় ইস্যু। মুন জে ইন ক্ষমতা নেওয়ার পর বিরোধীদল এই প্রথম এই সরকারের বিরুদ্ধে একটা ইস্যুতে অনেক মানুষকে সাথে পেয়েছে।
ন্যুনতম মজুরী নিয়ে গত দুই মাস অনেক আলোচনা, সমালোচনা হচ্ছে। বরাবরই কোম্পানীগুলো ঘোষিত ন্যুনতম মজুরী কমানোর দাবি জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। গত পরশুদিন (১৩ সেপ্টেম্বর) কোরিয়ার পরিকল্পনামন্ত্রী কিম দো ইয়ন স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটা বহাল থাকবে। পরবর্তী বছর থেকে বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার সবার মতামত বিবেচনা করবে। এইবার ঘোষিত মজুরী ঠিক রাখার পাশপাশি সরকার ছোট কোম্পানীগুলোকে ভর্তুকি/আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।
এখন ইপিএসের সাথে এর সম্পর্ক কি?
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সংগঠন ইপিএস কর্মীদের জন্য আলাদা পে স্কেল করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। না হলে ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দিতে হবে কিংবা চালাতে পারবে না বলে মতামত দিয়েছে।
কিন্তু কোরিয়া আইএলও (ILO) এর সদস্য দেশ হিসেবে বিদেশীদের জন্য আলাদা পে স্কেল করতে পারবেনা। সেটা স্পষ্টতই আইনবিরোধী এবং বৈষম্য হওয়ায় সরকার কোনভাবেই সেদিকে যাবে না।
ছোট এবং মাঝারি কোম্পানীগুলোর একটা সংগঠন কেবিজ (KBiz) বিদেশী কর্মী কাজ করে এমন ৩৬০টি কোম্পানীর উপর জরিপ চালিয়ে বলেছে বিদেশী কর্মীদের উৎপাদন ক্ষমতা কোরিয়ানদের চেয়ে কম এবং ৮৮% বলে উল্লেখ করেছে। তাছাড়া বিদেশীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছে। স্বদেশী কর্মী না পাওয়ায় কোন উপায় না পেয়েই তারা বিদেশী কর্মী নিয়োগ দেন বলেই জানিয়েছেন অধিকাংশ ফ্যাক্টরী মালিক।
বিদেশী কর্মীদের জন্য যেহেতু আলাদা বেতন স্কেল করা যাবে না, সেহেতু এই সংগঠনটি ট্রেনিং পিরিয়ড রাখার প্রস্তাব করেছে। তাদের প্রস্তাব ইপিএস কর্মীদের প্রথম বছর ন্যুনতম মজুরী ৮০% শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছর তা ৯০% শতাংশ করা হোক। এবং তৃতীয় বছর থেকে ১০০%ই দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই প্রস্তাবে পক্ষে অনেক লেখালেখি এবং আলোচনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকার এই প্রস্তাবকে তেমন কোন গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু অব্যাহত লেখালেখি এবং আলোচনার একটা প্রভাব পড়তেও পারে।
তবে আশার বাণী হলো, ইপিএস কর্মী বৃদ্ধির প্রস্তাব অব্যাহত রেখেছে এইসব সংগঠন। গত ১২ সেপ্টেম্বর কেবিজ (KBiz) আনুষ্ঠানিকভাবে ইপিএস কর্মীর কোটা বৃদ্ধির ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের সাথে মিটিং করেছে। এখনো কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি আইন মন্ত্রণালয়।
সরকার বিদেশী কর্মীদের ট্রেনিং পিরিয়ড কিংবা আলাদা মজুরী স্কেল করবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে যদি এই ধরণের কোন উদ্যোগ নেয় আমাদের দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দূতাবাসের এই বৈষম্যের ব্যাপারে সোচ্চার ভুমিকা থাকতে হবে।
সরওয়ার কামাল, সম্পাদক, বাংলা টেলিগ্রাফ।