ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাদের সিট-বাণিজ্যের সুযোগ নিয়ে বহিরাগতরা হলে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা এসব বহিরাগতকে সিট ভাড়া দেন। এদিকে, বহিরাগতদের দখলে থাকা এসব সিট উদ্ধার করতে গেলে হুমকির মুখে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এতে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সিট-বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, হলে বহিরাগতদের থাকার কোনো বিধান নেই। যদি কেউ থাকে, তবে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া আছে। তাঁরা দেখবেন।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘হলে কোনো আবাসিক শিক্ষার্থী ছাড়া বহিরাগত থাকতে পারবে না। যদি কোনো ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে, তবে আমরা ব্যবস্থা নেব। তা ছাড়া এ ব্যাপারে আমরা হল প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলব।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের মেইন বিল্ডিংয়ের ২৫৯ রুমে কয়েক মাস ধরে দুজনের একটি সিট নিয়ে থাকেন এক বহিরাগত। তাঁর পরিচয়, তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুলের ভাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, ওই সিটটি উদ্ধার করতে গেলে প্রথমে নানা বিতর্কের সম্মুখীন হন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বিতর্ক জড়ায় উত্তেজনায়। এ সময় এক শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘হলের শিক্ষার্থীরা এক রুমে ২০ জনের অধিক থাকেন, এ নিয়ে ছাত্রনেতাদের মাথাব্যথা নেই। অথচ নিজের ভাইকে দীর্ঘদিন এক রুমে সিটে রাখেন।’
অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল জানান, ‘ওই সিটে আমি আগে থাকতাম। এখন আমি রুম পরিবর্তন করেছি। তাই তাঁকে ওই রুমে রাখি।’ বহিরাগতদের কেন রাখা হয় জানতে চাইলে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘সে আমার ছোট ভাই। পরীক্ষা দিতে এসেছে।’ ছাত্রলীগের এই নেতার ছাত্রজীবন শেষ হলেও হলের প্রধান ভবনের একটি কক্ষ দখল নিয়ে থাকেন তিনি।
বহিরাগতের অবস্থানের বিষয়ে জানতেন আসিফ তালুকদার জানান, ‘সে নাজমুলের ছোট ভাই।’ বহিরাগতরা হলে থাকতে পারবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হলে আমার এখন দায়িত্ব নেই। আমি কিছু বলতে পারব না। প্রশাসন বলতে পারবে।’
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদদীন হলের ২১৭ ও ২১৮ নম্বর কক্ষে আট বহিরাগতকে সিট ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খানের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, এই দুই কক্ষে তাঁর নিজের এলাকার (ফরিদপুর) লোকেরা থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া দেওয়া এ কক্ষ দুটি উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের এ নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, এই দুটি কক্ষ উদ্ধার করতে গেলে এক বহিরাগত বলেন, তাঁদের চলতি মাসের ভাড়া দেওয়া আছে। এ মাস পর তাঁরা হল ছাড়বেন। যদিও সংঘর্ষের একপর্যায়ে বহিরাগতরা হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
ওই হলের মিশুক ও আরিফ নামের দুই শিক্ষার্থী জানান, বহিরাগতরা গত দেড় বছর এ দুটি কক্ষ নিয়ে থাকেন। শাহেদ নেতা হওয়ায় কেউ সাহস করে কথা বলতে পারে না। এদিন শিক্ষার্থীরা রুমটি উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শাহেদের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন শাহেদ খান। তিনি বলেন, ‘যাঁরা থাকেন, তাঁদের কেউ বহিরাগত নয়। হলের সাবেক শিক্ষার্থী।’ কক্ষ ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি খোঁজ নেওয়ার কথা বলেন।
অপর এক অভিযোগে জানা গেছে, ঢাবির জহুরুল হক হলের ২৫১ নম্বর কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে থাকেন রাজীব নামের এক বহিরাগত। গত কয়েক দিন আগে শিক্ষার্থীরা কক্ষটি উদ্ধার করতে গেলে এ শিক্ষার্থী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সোহানের বাড়ি আর রাজীবের বাড়ি একই জায়গায়। সে জন্য তাঁকে এ হলে সিট দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ সিটটি উদ্ধার করা হলেও এ বিষয়ে কথা বলেননি হল শাখা ছাত্রলীগের এ নেতা।
এর আগে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল (এস এম), হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, মাস্টারদা সূর্য সেন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে অবস্থান নেওয়া বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় হল প্রশাসন। যদিও এসব হলের অনেক কক্ষে এখনো বহিরাগতরা আছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।