সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। বর্তমানে ভারত ২৯টি রাজ্য ও সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিশিষ্ট একটি সংসদীয় সাধারণতন্ত্র। তাছাড়া ক্রিকেটের কারণেও ভারত সুপরিচিত।
কিন্তু ভারতের কিছু অঙ্গরাজ্যে এমন কিছু ঐতিহ্য চালু আছে যা আপনি শুনে বিশ্বাস করতে পারবেন না। এগুলো বেশ ভয়ঙ্কর। এইসব ঐতিহ্যর প্রতি আইনেরও তেমন কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। বছরের পর বছর এগুলো চলে আসছে। এইসব ঐতিহ্য এতো বেশী ভয়ঙ্কর যে শুধু শুনেই মানুষ ভয় পেয়ে যায়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা উদ্ভট ও ভয়ঙ্কর ঐতিহ্যগুলো নিয়েই আজকের আয়োজন ।
শিশুদের মাটিতে পুঁতে রাখা হয়: কর্ণাটকে শিশুদের মাটিতে পুঁতে রাখার একটি ঐতিহ্য প্রচলিত আছে। শিশুদের ৬ ঘন্টা গলা পর্যন্ত মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়। মানসিক এবং শারীরিক অসুখের চিকিৎসা হিসেবে এই কাজটি করা হয়!
মাথায় নারিকেল ভাঙ্গা: তামিলনাড়ুর মহালক্ষী মন্দিরে এই ঐতিহ্য প্রচলিত। এখানকার পুরোহিতরা ভক্তদের মাথায় বাড়ি দিয়ে নারকেল ভাঙ্গেন। এর কারণ হিসেবে বলা হয় এতে নাকি ভক্তের সৌভাগ্য, ভাগ্য ও স্বাস্থ্যর উন্নতি হয়। কি ভয়ানক!
চামড়ার ভিতর দিয়ে শিক ঢুকানো: তামিলনাড়ুর মহালক্ষী মন্দিরের ভক্তরা এই ধরনের আচার অনুষ্ঠান পালন করে! পিঠে লোহার হুক লাগিয়ে ভক্তরা একটা গাছ বা বাঁশের সাথে ঝুলে থাকে। এরপর তাদের সারা শহর ঘোরানো হয় এই অবস্থায়! বেশ ভয়ঙ্কর!
গবাদি পশু দ্বারা পদদলিত: মধ্যপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে গরুর শরীরে রঙ আঁকা ও লেপা হয়। মেহেদী এবং ফুল দিয়ে তাদের সাজানো হয়। এরপর গ্রামের রাস্তায় তাদেরকে দৌড়ানো হয়। গ্রামবাসী রাস্তায় পড়ে থাকে এবং তাদের উপর দিয়ে গরু দৌড়ায়! এর মাধ্যমে গ্রামবাসী সকল কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে এবং তাদের ভাগ্য ভালো হবে এই যুক্তি দেখানো হয়!
পশুর বিয়ে: ব্যাঙ, কুকুর থেকে শুরু করে গাধা পর্যন্ত সকল প্রানীকে শাস্ত্র অনুসারে বিয়ে দেওয়ার ঐতিহ্য ভারতের কিছু অঞ্চলে প্রচলিত। এই অঞ্চলগুলো হল -আসাম, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র। এই ঐতিহ্যের পেছনের কারণ হল মনে করা হয় এরকম করলে এলাকায় বৃষ্টি হবে! এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা এই ধরনের ঐতিহ্য পালন করে।
মৃত মানুষ ভক্ষণ: এটা শুনলে আপনার মাথার চুল খাড়া হয়ে যেতে পারে, আপনার বমি আসতে পারে, হয়তো আপনার বিশ্বাসই হবে না, কিন্তু এটা সত্যিই ঘটে। বানারসের আঘৌরি সাধুরা মৃতদেহের সাথে সহবাস করে! এছাড়াও মৃত মানুষের অবশিষ্টাংশ ভক্ষণ করে! এর মাধ্যমে তারা ঈশ্বরকে পেতে চায়! কি ভয়ঙ্কর!
রয়ে যাওয়া খাবারের উপর গড়াগড়ি খাওয়া: কর্ণাটকের কিছু গ্রামে নিচু শ্রেণীর মানুষ উঁচু শ্রেণীর ফেলে দেওয়া খাবারের উপর গড়াগড়ি খায়! এই ঐতিহ্য সত্যিই রয়েছে। নিচু শ্রেণীর লোকেরা মনে করে এতে তাদের সকল প্রকার বাধাবিপত্তি দূর হবে এবং তাদের ভাগ্য ভালো হবে!
জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাঁটা: তামিলনাড়ুর কিছু এলাকায় এই ঐতিহ্য চালু আছে। জ্বলন্ত কয়লার উপর ধীরে ধীরে হেঁটে যাওয়া এক ধরনের আশীর্বাদ হিসেবে ধরা হয়। এখানে শরীর নয়, আশীর্বাদই মুখ্য!
একে অপরকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা: অন্ধপ্রদেশের দেবরগট্টু মন্দিরের ভক্তরা প্রতি বছর দশেরার সময় একে অপরকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে! এর মাধ্যমে তারা দৈত্যদের হাত থেকে রক্ষার জন্য শিবকে স্মরণ করে। কি বিচিত্র ঐতিহ্য!
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত অনেক এগিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো এরকম অনেক উদ্ভট ও ভয়ঙ্কর ঐতিহ্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যমান। জ্ঞান-বিজ্ঞান তাদের সামনে নিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে এই কুসংস্কার গুলোর কারণে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে।
সৌজন্যে- ফাপরবাজ