রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে লাভজনক এবং এর যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সরকার। এ জন্য বিমানের আমূল সংস্কারের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া রুটগুলো চালু করা হবে। তৈরি করা হবে নতুন রুটও। রুট চালুর ক্ষেত্রে প্রবাসী বাঙালি অধ্যুষিত দেশ ও শহরগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আর বিমানবহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে সরকারের এই পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা প্রতিষ্ঠান বিমানকে আগামী তিন বছরের মধ্যে লাভজনক করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, বিমানকে কিভাবে লাভজনক করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হলে বিমানকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যাবে। কমিটির পক্ষ থেকে বিমানকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালনা করতে বলা হয়েছে, যাতে যাত্রীদের হয়রানি ও ভোগান্তি কমে আসে। তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটি পরিকল্পনাগুলো সুচারুভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কি না তা তদারকি করবে। তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন পরিকল্পনায় বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। তবে আন্তর্জাতিক রুটে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এতে লোকসান ও যাত্রী সংকটের কারণে স্থগিত থাকা রুটগুলো নতুন করে চালু হবে। পুরনো কিছু রুট নতুন করে সাজানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের দিল্লি, হংকং, ইতালির রোম, জাপানের টোকিও ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহর। এ ছাড়া লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন কয়েকটি রুটে বিমান চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের গোয়াংজু, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালদ্বীপের মালে ও সৌদি আরবের মদিনা শহর। এ ছাড়া সম্ভাবনাময় নতুন রুট খোঁজার কাজও চালানোর কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, কানাডার টরন্টো, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও ভারতের বাণিজ্যিক শহর মুম্বাইয়ে বিমান চলাচলে কতটা লাভজনক হবে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, নতুন রুট হিসেবে চীনের গোয়াংজু শহরে বিমান চলাচলে চীনের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন, জিএসএ নিয়োগ এবং স্লট পেয়েছে সরকার। উড়োজাহাজস্বল্পতার কারণে এত দিন বিমান উড়তে পারেনি। এটি চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চালুর কথা বলা হয়েছে। এটি চালু হলে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। একইভাবে, কলম্বো ও মালে রুটেও একই সময়ে ফ্লাইট পরিচালনার টার্গেট নির্ধারণ রয়েছে। এটা চালু হলে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট ঢাকা-কলম্বো-মালে-ঢাকা রুটে এবং অপর ফ্লাইটটি ঢাকা-কলম্বো-ঢাকা রুটে পরিচালিত হবে। আর সুপরিসর উড়োজাহাজ দিয়ে সৌদি আরবের মদিনা শহরে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মহাপরিকল্পনায় এসব রুট পরিচালনার জন্য নতুন উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে কোনো রুট যাতে লোকসানে না পড়ে সে জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আর আগামীতে যাতে বিমানের যাত্রীসেবা নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে বিমান সাতটি অভ্যন্তরীণ ও ১৫টি আন্তর্জাতিক রুটে যাতায়াত করছে। অভ্যন্তরীণ রুটগুলো হচ্ছে—চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও বরিশাল। আর আন্তর্জাতিক রুটগুলো হচ্ছে—আবুধাবি, দুবাই, জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম, কুয়েত, দোহা, মাস্কাট, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, ইয়াঙ্গুন, কাঠমাণ্ডু ও কলকাতা। আর লোকসানের কারণে দিল্লি, হংকং, রোম, টোকিও ও নিউ ইয়র্ক রুটে বিমান পরিচালনা স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে নিউ ইয়র্ক রুটটি আগেই চালুর জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
সৌজন্যেঃ কালের কণ্ঠ