গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আমদানী করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পাইপ লাইনে যুক্ত হলেই ঘোষণা দেওয়া হবে বলে বিইআরসি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
উচ্চমূল্যের এলএনজি পাইপ লাইনে যুক্ত হলে গ্যাসের গড় মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। এতে করে গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প দেখছে না সংস্থাটি। তবে সরকার যদি মনে করে আপাতত গ্যাসের দাম বাড়াতে চায় না প্রয়োজনে ভর্তুকি দেবে তাহলে দাম নাও বাড়তে পারে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
বিইআরসি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, আমরা গণশুনানি নিয়েছি। আইনে তিন মাসের মধ্যে আদেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা মোটামুটি চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে গেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আদেশ দেওয়া হবে। যেহেতু এলএনজি সংশ্লিষ্ট তাই এলএনজি পাইপ লাইনে সরবরাহ শুরু হলে আদেশ দেওয়া হতে পারে।
দাম বাড়ছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনই বলা যাচ্ছে না। সরকার যদি মনে করে ভতুর্কি দিয়ে চালাবে তাহলে গ্যাসের দাম বাড়বে না। আবার যদি মনে করে আংশিক ভর্তুকি দেবে তাহলে সেভাবেও হতে পারে, এটাই রেওয়াজ।
অপর এক সূত্র জানিয়েছে বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম হজ পালনে সৌদি আরবে রয়েছেন। তার ছুটি শেষ হবে ২৮ আগস্ট। তিনি দেশে ফিরলেই ঘোষণা আসতে পারে।
গত জুন মাসে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর উপর গণশুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। সেখানে সার উৎপাদনে সর্বোচ্চ ৩৭২ শতাংশ ও বিদ্যুতে ২০৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। আমদানি করা উচ্চমূল্যের এলএনজির কারণে বেড়ে যাচ্ছে গ্যাসের দাম। তার প্রভাবেই আকাশচুম্বি দরপ্রস্তাব বলে কোম্পানিগুলো দাবি করে। তবে আবাসিকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেনি কোনো কোম্পানি।
বর্তমানে দেশীয় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ১ দশমিক ৫১ টাকা হারে, বাংলাদেশে গ্যাস উৎপাদনকারী বিদেশি কোম্পানির (আইওসি) কাছ থেকে ৩ দশমিক ২৭ টাকা হারে কিনছে সরকার। অন্যদিকে কাতার থেকে যে এলএনজি এনে রিগ্যাসিফিকেশনের মাধ্যমে পাইপ লাইনে ছাড়া হবে। সেই গ্যাস প্রতি ঘনমিটারের দাম পড়ে ২৫ টাকা।
এই মুহূর্তে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই গ্যাস পাইপ লাইনে যুক্ত হলে ক্রয়মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে বিশাল গ্যাপ তৈরি হবে। আর সেই গ্যাপ সামাল দিতেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে।
যে এলএনজি পাইপ লাইনে সরবরাহের অপেক্ষায় বিইআরসি। সেই এলএনজি গত মে মাসে পাইপ লাইনে সরবরাহ করার কথা ছিল। শেষ মুহুর্তে পরীক্ষামূলক সরবরাহ করতে গিয়ে লিকেজ ধরা পড়ে। এরপর দফায় দফায় তারিখ পরিবর্তন শেষে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সরবরাহের কথা জানিয়ে ছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা উচ্চমূল্যের দর বাড়ানোর প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। ২০৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিপরীতে তারা ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে বিইআরসি ২৫ শতাংশ দাম বাড়াতে চায় বিদ্যুতে।
গ্যাসের দাম বাড়লে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে কি এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি ৫ শতাংশ দাম বাড়ে তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। তখন গ্যাসের সরবরাহ বেড়ে গেলে তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেবেন। তাতেই ব্রেক ইভেনে থাকবে। তবে বেশি পরিমাণে বাড়লে নতুন করে ভাবতে হতে পারে।
ব্যবহারকারী ভেদে গ্যাসের দামে তারতম্য রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার ৩ দশমিক ১৬ টাকা, সার উৎপাদনে ২ দশমিক ৭১ টাকা, সিএনজি ফিড গ্যাস ৩২ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ার ৯ দশমিক ৬২ টাকা, শিল্প ৭ দশমিক ৭৬ টাকা, বাণিজ্যিকে ১৭ দশমিক ০৪ টাকা দর রয়েছে।
সূত্র- বাংলানিউজ