কানাডা শব্দটি ১৬ শতকের দিকে ফরাসি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পর ব্যবহার করা হয়। ‘Kanata’ থেকে কানাডা শব্দটি এসেছে। এটি একটি Huron-Iroquois শব্দ যার অর্থ Village or Settlement। এটি নুনাভাত অঞ্চলের সরকারি ভাষা।
কানাডা অভিবাসনের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। নৃ-তাত্ত্বিকরা অভিবাসনের বিভিন্ন সম্ভাব্য মডেলগুলোকে ও তাদের প্রাক পরিচিতির জনগোষ্ঠীর উপর বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। বিশ্বাস করা হয় যে, ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ইউনুট (যারা এস্কিমো একটি দল, প্রায় ২০ শতাব্দী থেকে যাদের দেখা মেলে। যারা আটলান্টিক মহাসাগরের গ্রীনল্যান্ড, কানাডা ও আলাস্কার আদিবাসী) অন্যান্য আদিবাসীদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে এসেছিল। যারা উত্তর কানাডার নুনাভাত ও নুনাভিক নামক রাজ্যে বসবাস শুরু করেছিল।
কেউ কেউ বলেন, দ্য ভাইকিংস- যারা প্রথম আইসল্যান্ড থেকে (১ হাজার বছর আগে গ্রীনল্যান্ডের উপনিবেশক ছিল) সর্ব প্রথম কানাডার ল্যাব্রাডোর ও নিউ ফাউন্ডল্যান্ডে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে বসবাসের জন্য এসেছিল। ইউরোপিয়ানদের আবির্ভাব ঘটেছিল ১৪৯৭ সালে জন ক্যাবট নামক এক ব্যক্তির হাত ধরে, যিনি প্রথম এঁকেছিলেন কানাডার পূর্ব কোস্টের মানচিত্র। গ্রীনল্যান্ডিক ইউনুট প্রাচীন আদিবাসী বংশের আদিম বংশধর, যাদের আবার কিছু অংশ পূর্ব দিকে চলে আসেন। যারা এখন বর্তমানে ডেনমার্কের নাগরিক।
৯৩৪ থেকে ১৫৪২ সালের মধ্যে ফ্রেঞ্চ এক্সপ্লোরার জ্যাকুইস কারসিয়ার ৩টি আবিষ্কার ভ্রমণ যাত্রা শুরু করেছিলেন আটলান্টিকজুড়ে। তৎকালীন ফ্রান্সের রাজা ফ্রান্সিস প্রথমের জন্য জমি দাবি করেন। দুই আদিবাসী ফরাসি যুবক অনুসন্ধানকারী জ্যাকুইস কারসিয়াকে কানাটা যাওয়ার পথ বলেছিলেন। তারা আসলে স্টাডাকোনা গ্রামের কথা বলেছিল, যা বর্তমানে কুইবেক সিটি।
কানাডা প্রথম ফরাসি উপনিবেশ, যা নিউ ফ্রান্সের মধ্যে বিভিন্ন উপনিবেশের সাথে গঠিত। সেন্ট লরেন্স নদী এবং গ্রেট লেকের উত্তর দালান বরাবর সেটআপ করা হয়েছিল। যা পরবর্তীতে বৃটিশ কলোনিতে পরিণত হয়েছিল। যার নাম দেওয়া হয়েছিল বৃটিশ কলম্বিয়া। ১৯৬৭ সালে কনফেডারেশনের মাধ্যমে প্রথম সরকার গঠন করে, যা ডোমিনিওন সরকার নামে পরিচিত ছিল।
উত্তর আমেরিকার প্রথম বাসিন্দারা সাধারণত বেয়ারিং ল্যান্ড সেতুর মাধ্যমে সাইবেরিয়া থেকে বিভিন্ন জায়গায় মাইগ্রেট হওয়ার চিন্তা-ভাবনা করেন, যা কমপক্ষে ১৫ হাজার বছর আগে। ওল্ড ক্যো ফ্ল্যাট এবং বলুফিশ গুহাগুলো পালিয়ে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে কানাডায় বসবাসকারী মানুষের বসবাসের দুটি প্রাচীনতম স্থান। কানাডীয় আদিবাসী সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল মাইগ্রেশন, কৃষি কাজ ও ট্রেডিং নেটওয়ার্ক। ১৫ শতকের শেষের দিকে এবং ১৬ শতকের শেষের দিকে ইউরোপীয় এক্সপ্লোরাররা এই পুরাতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে শুধু কিছু কিছু নতুন সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটায়।
১৬০৪ সালে ফ্লোরিডার উত্তরে প্রথম ইউরোপিয়ানরা Pierre De Monts & Samuel De Chaplain নামক দুজন ফরাসি প্রথমে বসতি স্থাপন করেন। প্রথমে সেন্ট ক্রোয়েক্স দ্বীপে (বর্তমানে মাইনের মধ্যে, তারপর একাডিয়া পোট-রয়্যালে বর্তমান দিন নোভা স্কসিয়া) ১৬০৮ সালে চ্যাপলিন কুইবেক সিটিতে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। উপনিবেশবাদীরা একটি কঠোর জলবায়ুর বিরুদ্ধে বসবাস সংগ্রাম শুরু করেন। এভাবেই কানাডাতে তৈরী হয় রয়েল নিউ ফ্রান্স। কুইবেক প্রদেশের ৯০ শতাংশ অভিবাসী ফ্রান্স থেকে এসেছেন।
এই আদিবাসীদের একটি অংশকে ফাস্ট নেশন ইউনুট ও আরেকটি অংশে মেটিস বলা হয়। মেটিস হলো ইউরোপিয়ান ফরাসি। যা আধুনিক মধ্য বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মিক্সড ব্লাড মানুষ নামে আবির্ভূত হয়। যখন প্রথম জাতিসমূহ এবং ইউনুট লোকেরা ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের বিয়ে করেছিল।
২০১৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আদিবাসীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ৫০ হাজারের মতো। যা মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশের মতো। যাদের মধ্যে ফাস্ট নেশন প্রায় ১০ লাখের মতো এবং ৫ লাখ ৮৭ হাজারের মতো মেটিস এবং ৬৫ হাজারের মতো ইউনুট।
কানাডার রয়েল কমিশনের মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে ২ মিলিয়ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ লাখ আদিবাসীকে প্রথম ইউরোপীয় হিসাবে মাইগ্রেশন দেওয়া হয়। ইউরোপীয়ান উপনিবেশিকতার ফলে কানাডিয়ান আদিবাসীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে কমতে থাকে। বথুক নামে একটি আদিবাসী হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়ার পেছনে কারণ ছিল বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি। যেমন- ইনফ্লুয়েঞ্জা, খিঁচুনি ও বসন্ত। তাছাড়া বাসিন্দাদের মধ্যে নিজস্ব বিরোধ ও উপনিবেশিক কর্তৃত্ব ইত্যাদি কারণে কানাডিয়ান আদিবাসীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল।
কিন্তু ইউরোপীয়ান কানাডিয়ানরা ফাস্ট নেশন ও ইউনুট জাতির সাথে পারস্পারিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে ছিল। ফাস্ট নেশন ও মেটিস জনগোষ্ঠী কানাডার উপনিবেশের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। বিশেষ করে নর্থ আমেরিকার ফার বাণিজ্যের সময় মহাদেশের অনুসন্ধানে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের Courerur Des Bois এর সফরকে সাহায্য করেছিল। রাউন ও আদিবাসী লোকেরা উপনিবেশকালের মধ্যে আন্তঃক্রিয়া শুরু করেছিল। ১৮ শতকের শেষের দিকে ইউরোপীয়ান কানাডিয়ানরা আদিবাসীদের তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে আত্মসমর্পণে উৎসাহিত করেছিল। যাকেCanadian Immigrant Integration Program নামে অভিহিত করা হয়।
এই আদিবাসী জনগোষ্ঠী প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় উপনিবেশের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। এভাবেই একটি অনন্য সমৃদ্ধশালী কানাডিয়ান সংস্কৃতির পরিচয় বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কানাডায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব ১৮৫১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়। ১৯০১ সালের শুরুতে ডোমেনিয়ন সরকার আদমশুমারি নীতি চালু করেন। ক্লিফোর্ড সিফটন নামের একজন ল’য়ার দিয়ে ডকুমেন্টস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৪৭ সালে ডোমেসটিক ইমিগ্রেশন নিয়মে অনেক পরিবর্তন আনা হয়। বর্তমান IRP (The Immigration & Refugee Protection Act-2001) পার্লামেন্টে পাস হয়। যাকে আমরা বর্তমান ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট বলে জানি। যা ২০০২ সালের ২৮ জুন থেকে বর্তমান পর্যন্ত চালু আছে। কানাডা সরকার পার্লামেন্টে এ আইন পাস করে সারা পৃথিবী থেকে মাইগ্রান্ট নেওয়ার ঘোষণা দেন।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ