মালয়েশিয়ায় গত ৬ মাসে ৩৭৩ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দূতাবাস সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সে দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৭৩ জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে স্থায়ী ভাবে দেশের পরিবারের অনুমতি নিয়ে ৩ জনের লাশ দাফন করা হয় এবং বাকী ৩৭০ জনের লাশ দেশে পাঠানো হয়েছে। হার্ট অ্যাটাক, রোড অ্যাক্সিডেন্ট ও কনস্ট্রাকশন সাইডে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানা গেছে।
নিহতদের মধ্যে যাদের বৈধতা রয়েছে এবং কাগজ পত্র সঠিক তারাই ক্ষতিপূরণ পাবেন। আর এই ক্ষতিপূরণ আদায়ে দূতাবাস সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে থাকে। আর এ অব্যাহত প্রচেষ্টা ও সক্রিয় আইনি সহায়তায় চলতি মাসে ১৯ লাখ ২০ হাজার ২২ টাকা এবং জুন মাসে ২১ লাখ ২২ হাজার ৮৪৩ টাকা। মোট ৪০ লাখ ৪২ হাজার ৯০৫ টাকা ক্ষতি পূরণ আদায় করা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের আওতায় খুবই কম বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রশাসনিক ধীরগতি ও হয়রানিসহ নানা কারণে বেশিরভাগ শ্রমিকের পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এক বছর অতিবাহিত হলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি বরিশালের মৃত ফজলু দফাদারের পরিবার। দফায় দফায় প্রবাসী কল্যাণ অফিস ও বাংলাদেশ দূতাবাসে ধরণা দিয়েও ক্ষতি পূরণের টাকা পাচ্ছেন না মৃতের পরিবার। অভিযোগে জানা যায়, বরিশাল সদরের চরবুখাই নগর গ্রামের আছমত আলী দফাদারের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী মৃত ফজলু দফাদার পাসপোর্টনং (এফ-০৪৭৬৩৬৫) সিলনং-১২, ক্লেইমনং-৯৬/২০/৬,তারিখ: ০৭/১১/২০১৭, তার মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ হাইকমিশন থেকে মৃতের স্ত্রী চার কন্যার নামে পাঁচটি ড্রাফ্ট প্রেরণ করা হয়।
মৃতের পরিবার ডিইএমও বরিশাল হতে ড্রাফ্ট গ্রহণের পর বরিশালের বিভিন্ন ব্যাংকে ড্রাফ্টসমূহ জমা দিতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান, ড্রাফ্টগুলো ভাঙ্গানো যাবেনা। পরবর্তীতে মৃত ফজলু দফাদারের পরিবার ঢাকাস্থ ডাচ-বাংলা ব্যাংক, শান্তি নগর শাখায় জমা প্রদান করতে গেলে ড্রাফ্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান।
ফলে মৃতের স্ত্রী শাহানূরের নামে একক চেক পাওয়ার জন্য পাওয়ার অব এটর্নিসহ মূল ড্রাফ্ট পাঁচটি ডিইএমওর মাধ্যমে হাইকমিশনে শ্রম কাউন্সিলরে ফেরত পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত দূতাবাস ক্ষতিপূরণের সূরাহা করতে পারেনি বলে এ প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানান মৃত ফজলু দফাদারের স্ত্রী শাহানূর।
এ বিষয়ে দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্ষতিপূরণের চেক সময় মত তারা ব্যাংকে জমা না করায় এ সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সমাধানের। এ দিকে গত দুই বছরে মালয়েশিয়ার শরণার্থী শিবিরে আটক শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রোগে ভুগে বা অন্যান্য নানা কারণে তাদের মৃত্যু হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের একটি পরি সংখ্যানে দেখা গেছে, মারা যাওয়া অর্ধেকেরই বেশি মিয়ানমারের। মিয়ানমারে দমনপীড়ন থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারাসহ বহু শরণার্থী মালয়েশিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিল। তবে আটক কেন্দ্রে কতজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে তা জানা যায়নি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, রোগে ভুগে যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা পর্যাপ্ত স্যানিটেশন, খাবারের অভাবে, শারীরিক নিগ্রহ কিংবা চিকিৎসার অভাবে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়ে থাকতে পারে।