অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে বসবাস ও কাজের সুযোগপ্রত্যাশী অনেকেই। তবে অনেক ক্ষেত্রেই সে স্বপ্নে জল ঢেলে দেয় দেশটির ভিসার আবশ্যিক শর্ত স্পনসর। শিক্ষা ও কর্মের প্রায় সকল প্রধান ভিসাগুলোয় কোনো স্পনসর কর্তৃক মনোনীত হলে তবেই আবেদন করা সহজ হয় সাধারণত। তবে ভিসাপ্রত্যাশী একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ পেশাদার হলে স্পনসর ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ীভাবে বসবাস করা ভিসা পেতে পারেন।
জেনারেল স্কিল মাইগ্রেশন (জিএসএম) ভিসার অন্তর্গত সাবক্লাস ১৮৯ বা স্কিলড ইন্ডিপেনডেন্ট ভিসা তেমনই একটি ভিসা স্ট্রিম। এটি একটি স্বাধীন ভিসা। অর্থাৎ যোগ্যতা প্রমাণিত হলে সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগই এ ভিসায় আবেদনের আমন্ত্রণ জানাবে ভিসাপ্রত্যাশীকে। আর এ জন্য কোনো স্পনসরের প্রয়োজন নেই। এ ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো রাজ্যেই কাজের অনুমতি পাবেন সাবক্লাস ১৮৯ ভিসাধারীরা। এ ভিসা জেনারেল স্কিল মাইগ্রেশনের (জিএসএম) অন্তর্গত। এ ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া জিএসএম ভিসার মতোই। বয়স, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পয়েন্ট সংগ্রহ করে অনলাইনভিত্তিক এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) পূরণ করতে হবে। এ ভিসার সাধারণ আবেদন প্রক্রিয়ার আলোচনা থাকছে এখানে।
আবেদনের আগে যা জানা প্রয়োজন: জেনে রাখা ভালো জিএসএম ভিসা শুধুমাত্র দক্ষ ও অভিজ্ঞ পেশাদারদের জন্য। তবুও প্রতিবছর অসংখ্য অভিবাসনপ্রত্যাশী এ ভিসায় আবেদনের জন্য অংশ নেন। তাই স্কিলড ইন্ডিপেনডেন্ট ভিসাসহ যেকোনো জিএসএম ভিসায় আবেদনের আগে কিছু বিষয় নিশ্চিত করে নিন। প্রথমেই অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে আবশ্যিক সকল শর্ত আপনি পূরণ করছেন কিনা তা জেনে নিন। আপনার নির্ধারিত পেশাটি এ ভিসার পেশা তালিকায় রয়েছে কিনা তাও অবশ্যই যাচাই করে নিন। পাশাপাশি আপনি সর্বনিম্ন ৬৫ পয়েন্ট পাবেন কিনা তাও একই ওয়েবসাইট থেকে হিসাব করে নিন। এরপর আপনার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র হাতের কাছে রাখুন। আপনার পেশাটির জন্য আবশ্যিক স্কিল অ্যাসেসমেন্টও করে নিতে হবে।
ইওআই জমা দিন: জিএসএম ভিসার মতোই সাবক্লাস ১৮৯ ভিসায় সরাসরি আবেদনের সুযোগ নেই। অভিবাসন বিভাগ আপনাকে যাচাই করে আমন্ত্রণ জানালে তবেই আবেদন করা যাবে। আর আমন্ত্রণ পেতে অনলাইনে এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট পূরণ করে জমা দিতে হবে। এ জন্য অভিবাসনের বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে স্কিল সিলেক্টের মাধ্যমে ইওআই জমা দিতে হবে। ইওআই জমা হলে ইমেইলের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করে দেবে অভিবাসন বিভাগ। যদিও ইওআই একবার জমা হয়ে গেলে এর তথ্য আবারও পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। তবুও ইওআই সাবধানে পূরণ করুন। আর আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ায় থাকা অবস্থায় ইওআই পূরণ করেন এবং আপনার বর্তমান ভিসার মেয়াদ শেষ হতে চলছে, তবে আপনাকে নতুন ভিসায় আবেদন করতে হবে। ইওআই ব্রিজিং ভিসা হিসেবে কাজ করবে না। একবার জমা হয়ে গেলে আপনার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করতে হবে না। ইওআই জমা হওয়ার সর্বোচ্চ দুই বছরের মধ্যে এর ফলাফল জানিয়ে উত্তর আসবেই।
আমন্ত্রণ পেলে: সাবক্লাস ১৮৯ ভিসার আবশ্যিক শর্ত পূরণ করে সর্বনিম্ন ৬৫ পয়েন্ট অর্জন করলে এ ভিসায় আবেদনের জন্য আমন্ত্রণ পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে আপনার পয়েন্ট যত বেশি হবে, আমন্ত্রণ পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। আমন্ত্রণ পাওয়ার সর্বোচ্চ ৬০ কর্ম দিবসের মধ্যে আপনাকে আবেদন করতে হবে। তবে খেয়াল করুন, সাবক্লাস ১৮৯ বা জিএসএম ভিসায় আমন্ত্রণ পাওয়া মানেই কিন্তু ভিসা মঞ্জুর হওয়া নয়। আপনি আপনার পেশায় কতটা দক্ষ এবং এ ভিসার জন্য কতটা যোগ্য সেটাই কেবল ইওআইয়ের মাধ্যমে যাচাই করেছে অভিবাসন বিভাগ। আপনার ভিসাসংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি কিন্তু অভিবাসন বিভাগ এখনো খতিয়ে দেখেনি। সে কাজটিই করা হবে আপনি ভিসায় আবেদন করার পর। অন্যান্য ভিসাগুলোর মতোই এ ভিসায় অনলাইনে আবেদন করা যাবে। অনলাইনেই সকল প্রমাণাদি জমা দিতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে সাধারণত ৮ থেকে ১১ মাসের মধ্যেই ফলাফল জানিয়ে দেবে অভিবাসন বিভাগ।
লেখক- কাউসার খান, অভিবাসন আইনজীবী, অস্ট্রেলিয়া,
ইমেইল- immiconsultants@gmail.com
সৌজন্যে- প্রথম আলো