Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

saudi-bangladeshiসৌদি আরবে বাংলাদেশীদের জন্য ১২ ধরনের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এখন থেকে এই ১২ ধরনের কাজ সৌদি নাগরিকরাই করবে। এতে করে কয়েক লাখ বাংলাদেশী কর্মীকে দেশে ফেরত আসতে হবে। অন্যদিকে, যে সব কর্মী দেশটিতে কাজ করতে পারবেন তাদের দ্বিগুণ ফি দিয়ে ইকামা নিতে হচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে সৌদি কর্তৃপক্ষ নতুন নিয়মের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতি মাসে কর্মীদের বেতনের অর্ধেকের বেশি টাকা ইকামা ফি বাবদ দিতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কর্মীদের সৌদিতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। সব চেয়ে বড় বাজার সৌদি আরবে এ অবস্থা সৃষ্টি হলে শ্রম বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবে প্রবাসী কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত করা হয়েছে। দেশটিতে প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সৌদি সরকার। সম্প্রতি সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় এমন ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণার পর কর্মীদের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সৌদি নাগরিকদের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতেই প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখা হচ্ছে। এ ঘোষণায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশী কর্মীরা। ইতোমধ্যে সৌদিতে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেক সঙ্কুচিত করা হয়েছে। বাংলাদেশী কর্মীরা মনে করছেন, তাদের অনেককেই কাজ হারাতে হতে পারে। বর্তমানে হাজার হাজার কর্মী ১২ ধরনের কাজের বাইরে নতুন করে কাজ খুঁজছেন।

chardike-ad

সৌদি থেকে ইকবাল নামের এক কর্মী টেলিফোনে জানিয়েছেন, তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে সৌদিতে ব্যবসা করছেন। এখন তার ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে তার প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি এখন অন্য কোন কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু যে ধরনের কাজ পাওয়া যাচ্ছে তাতে ওই সব কাজ তার পক্ষে করা সম্ভব হচ্ছে না। তার মতো কয়েক লাখ বাংলাদেশী নাগরিক বেকার হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ ‘ওয়াড জব’ খুঁজে নিচ্ছে। আবার অনেকে দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন।

সৌদি কর্তৃপক্ষের ঘোষণা এখন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ১২ ধরনের কাজের মধ্যে রয়েছে, নারী-পুরুষ, শিশুদের রেডিমেট সব কাপড়ের দোকান, ক্রোকারিজ সামগ্রীর দোকান, গাড়ির শোরুম, গাড়ির পার্টসের দোকান, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির দোকান, হাসপাতাল, যন্ত্রপাতির দোকান, চকলেট বা মিষ্টান্নের দোকান, গৃহনির্মাণ সামগ্রীর দোকান, চশমার দোকান, ঘড়ির দোকান, কার্পেট পাপোশ ও ফার্নিচারের দোকান। এসব কাজে কয়েক লাখ বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন। এসব পেশায় বাংলাদেশী কর্মীদের চাকরির সীমাব্ধতা তৈরি করা হয়েছে। আগে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ব্যবসা করতে পারতেন। এখন কোন বাংলাদেশী ব্যবসা করতে পারবেন না। ছোট বড় কোন ব্যবসাই প্রবাসীরা করতে পারবে না বলে সৌদি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলেছে, সৌদি আরব গত কয়েক বছর ধরেই তাদের বাজেট ঘাটতিতে চলছে। বিদেশী কর্মীদের কয়েক ধরনের কাজ থেকে সরিয়ে তাদের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বেকার সমস্য দূর করার জন্যই তারা মূলত এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে বাংলাদেশের শ্রম বাজারে কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ দেশটিতে নানা ধরনের কাজ রয়েছে। ওই সব কাজে বাংলাদেশ থেকে তাদের বিপুল সংখ্যক কর্মী প্রতিবছরই নিতে হবে।

গত বছরের শেষ দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি জানিয়েছেন, বিদেশে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ১০ লাখ ৮ হাজার কর্মী বিভিন্ন দেশে চাকরি পেয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবেই সব চেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়োগ পেয়েছে। এরপরেই জর্দান ও ওমানের স্থান। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম এত বেশিসংখ্যক কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। এ হিসাব ২০১৬ সালের তুলনায় শতকরা ২৮ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়োগ পেয়েছে সৌদি আরবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্য অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশের মানুষই দেশের সম্পদ। তারা বিশ্বের ১৬৫টি দেশে শ্রম ঘাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠাচ্ছেন কর্মীরা। তাদের টাকায় দেশের অর্থনীতি প্রতিনিয়ত সুসংহত হচ্ছে। অভিবাসন খাতকে দেশের অন্যতম প্রধান খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ১০ লাখ ৮ হাজার কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৭ সালেই প্রথম এত বিপুল সংখ্যক কর্মী বিদেশে চাকরি পেয়েছেন। ২০১৮ সালে কর্মী নিয়োগের টার্গেট নেয়া হয়েছে ১২ লাখ। আমরা আশা করছি এ বছরও এই টার্গেট পূরণ হবে। সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার।

সৌজন্যে- জনকণ্ঠ