১২ বৎসর হলো দেশান্তরি হয়েছি, সেই ২০০৬ এর অক্টোবরে। গুনে গুনে প্রায় ১২টি বছর পার করলাম এই প্রবাস জীবনে। এত বছরে ঈদ যে তার দ্বিগুণ হিসাবে জীবন থেকে চলে গেছে বুঝতেই পারিনি। বুঝতে পারিনি কথাটা আসলে বোধহয় ঠিক নয়, আসলে জীবনের তাগিদে পড়াশোনার চাপে প্রবাসের ঈদগুলো কেমন যেন ছন্নছাড়া।
এত বছর দেশে ঈদ করতে না পারার দলে আমার মতো আরও হাজারো লাখো প্রবাসী রয়েছে। এর মাঝে আসলে কয়েকবার দেশে যাওয়া হয়েছে কিন্তু ভাগ্যে ঈদ পালন করা লেখা ছিল না।
কারণ প্রতিবারই হয়তো ভার্সিটি কিংবা জবের থেকে ছুটি মিলত না ঈদের সময় যাওয়ার। তাই ঈদের মজাটা কেমন, আমেজটা কেমন, সেলামিটা কেমন হয় তা প্রায় ভুলতে বসেছি, সঙ্গে মায়ের হাতের ঈদের নানান পদের রান্না যেমন সেমাই, ফিন্নি, জর্দা আর বোনের হাতের টক ঝাল চটপটি।
ঈদের আগের দিনের অনুভূতিটা মনে হয় সবচেয়ে রোমাঞ্চকর, আজ চাঁদ উঠলেই কাল ঈদ। এর মাঝে হয়তো সবাই ঈদের নতুন জামাকাপড় কিনে ফেলত। চারদিকে শুরু হয়ে যায় উৎসবের আমেজ, যাকে বলে ‘চাঁনরাইত’।
দেশে থাকার সময় বাবা, দাদা আর ভাইদের সঙ্গে নতুন পায়জামা পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজ শেষে আত্মীয়স্বজনদের বাসায় যেতাম ঈদের সেলামি আর নানা পদের খাবার আশায়।
কে কার থেকে কত বেশি সেলামি পেতাম তা নিয়ে রীতিমতো প্রায় প্রতিযোগিতা চলত। আর সে টাকা দিয়ে মেলা থেকে কতকিছু কিনতাম সবাই মিলে। আর এখন বড় হয়ে যাওয়ায় হয়তো সেই সেলামি আমি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে দিতাম।
কিন্তু প্রবাসে আসার পর ঈদ করতে না পারার পাশাপাশি এর সুখের অনুভূতিটা ও হারালাম। এখানেও সকালে ঈদের নামাজ শেষে পরিচিত অনেকের বাসায় বেড়াতে যাওয়া হয় অনেক খাওয়াদাওয়াও হয়। কিন্তু স্বদেশের ঈদের যে আমেজ, প্রিয়জনের কাছে থাকার যে অনুভূতি, তা কি পূরণ হয়?
লেখক- ওয়াহেদ ফেরদৌস ফরহাদ, আয়ারল্যান্ড থেকে
সৌজন্যে- যুগান্তর