গত দুদিন ধরে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের ঝঁকিপূর্ণ স্থানে বালুর বস্তা দিয়ে চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হল না। শনিবার মধ্য রাতে পৌরসভার বারইকোনা এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে শহরের তিনটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। জেলায় পানিতে ডুবে এখন পর্যন্ত (রোববার দুপুর) ছয়জন মারা যাওয়া খবর পাওয়া গেছে।
নতুন করে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দোকান পাট-বাসাবাড়িতেও প্রবেশ করেছে পানি। এছাড়া নিম্নাঞ্চলের ৫টি ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শহরের সাথে সিলেটসহ চার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে।
এছাড়া চারটি সরকারি খাদ্য গুদামে পানি প্রবেশ করায় মজুদ খাদ্য নষ্ঠ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অনেকে বাড়ী ঘড় ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে উঠেছেন। দুর্গতের সহায়তায় ৪৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ।
পানিতে ডুবে মারা গেছে ছয়জন। এর মধ্যে কুলাউড়া উপজেলায় টিলাগাঁও ইউনিয়নের লংলা চা বাগানের বাসিন্দা প্রদীপ মালাহা (২৮) ১৩ জুন বুধবার সন্ধ্যায় পানির স্রোতে ভেসে গেছেন। ২ দিন পর শুক্রবার সন্ধ্যায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নাওরপুর এলাকায় পানি স্রোতে ভেসে যায় আব্দুস সাত্তার ও ফরিদ আহমদ নামের পিতা পুত্র। শনিবার সকালে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ঈদের দিন শনিবার সকাল ৭টা শমসেরনগর-কমলগঞ্জ রোডের মরাজানেরপাড় এলাকায় পানির স্রোতে ভেসে যান সিংরাউলী গ্রামের জামাল মিয়া (৫০)। পরে দুপুর ১২টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে বুধবার (১৩) জুন রাতে নামাজ পড়তে গিয়ে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে নিখোঁজ হয় রাজনগরের কমারচক ইউনিয়নের করাইয়া গ্রামে ইমন মিয়া (১০) নামের এক শিশু। পর বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাসমান অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার রাতে মারা গেছেন ফয়জুল হক নামের আরেক যুবক। তিনি কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, শহরের চাঁদনীঘাট পয়েন্টে স্মরণকালে রেকর্ড বিপদসীমার ১৮০ সেমি উপর দিয়ে মনু নদের পানি প্রবাহিত হয়। তবে বর্তমানে কমে ১৫৪ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরধলাই নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপদসীমার নিচে চলে এসেছে। আশা করা যায় দুয়েক দিনের মধ্যে সব পানি নেমে যাবে।
স্থানীয়দের সাথে সেনাবাহিনীর বিশেষ দল দুর্গত এলাকা থেকে পানিবন্দি মানুষ উদ্ধার ও সহযোগিতা করছে।
জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, ত্রাণ সামগ্রীর জন্য চিন্তা নেই, প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। প্রয়োজনে আরো ত্রাণ বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।