Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

bapparajঢাকাই চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম বাপ্পারাজ। নায়করাজ রাজ্জাক তার পিতা। সেই পরিচয়ে নিজেকে তিনি আবদ্ধ রাখেননি। অভিনয়ে নিজের প্রতিভা ও মেধার বিকাশ ঘটিয়েছেন চলচ্চিত্রে। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘চাপাডাঙার বউ’ ছবি দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক। তিন দশকেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে বাপ্পারাজ অভিনয় করেন শতাধিক চলচ্চিত্রে।

নানা আমেজ, ইমেজ, স্বাদের গল্প ও চরিত্রে তাকে দেখেছেন দর্শক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ত্রিভুজ প্রেমের ছবিতে স্যাক্রিফাইসিং চরিত্রগুলোতে বা ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রে বাপ্পারাজ এই দেশের সিনেমায় একটি ব্র্যান্ড, একটি খ্যাতি এবং দারুণ সাফল্যের উদাহরণ। ‘প্রেমের সমাধি’, ‘প্রেমগীত’, ‘হারানো প্রেম’, ‘ভুলোনা আমায়’, ‘বুক ভরা ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসা কারে কয়’ ইত্যাদি চলচ্চিত্রগুলো বাপ্পারাজকে দিয়েছে অনন্য জনপ্রিয়তা।

chardike-ad

আজকাল আর অভিনয়ে নিয়মিত নন। দীর্ঘদিন পর তিনি কাজ করেছেন ‘পোড়ামন-২’ সিনেমায়। সম্প্রতি এই ছবির প্রচারের অংশ হিসেবে এক ইফতারে দেখা যায় তাকে। সেখানে একান্ত আলাপে জানান নিজের ক্যারিয়ার, শুটিং অভিজ্ঞতা নতুন সিনেমার অনেক কথা। লিখেছেন লিমন আহমেদ-

ক্যারিয়ারজুড়েই দেখা গেছে আপনি নানা প্রজন্মের নায়কদের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। আজকাল দুজন নায়ক এক ছবিতে অভিনয় করতে চায় না। এর কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

কারণ আজকালকার নায়করা ভয় পায়। আত্মবিশ্বাসের অভাব। প্রতিপক্ষের সামনে নিজেকে দাঁড় করাতে ভীত তারা। ভাবে যদি আমার চেয়ে ওই নায়ক বেশি হিট করে ফেলে। কিন্তু নিজেকে তৈরি করে না। পাশাপাশি হিংসাও একটি কারণ। নায়কদের মধ্যে প্রতিযোগিতা, হিংসা সবই থাকতে পারে। সেটি কাজের বেলায় হবে। কিন্তু আমার মনে হয় এখন ব্যক্তি জীবনে হচ্ছে।

অনেকে নায়কদের জুটির অন্তরায় হিসেবে জুতসই গল্পের অভাব, ভালো নির্মাণকেও দায়ী করে। আপনি কী একমত?

একদমই না। কারণ যেসব ছবি দিয়ে আমরা হিট হয়েছি তারা এখনো আছে। সময় বদলায়, কিন্তু মানুষ বদলায় না। মানুষ আপডেট হয়। আর প্রযুক্তির বিকাশ ঘটলেই এখানকার সবাই আপডেট হবেন। ত্রিভুজ প্রেমের গল্পগুলো সাদামাটা হয়, কিন্তু ইউনিক ভাবনা, চমৎকার সংলাপের। তার জন্য গল্পের অভাব এই দেশে কোনোদিন ছিল না, এখনো নেই বলেই বিশ্বাস করি। আর ত্রিভুজ প্রেম ছাড়াও নায়কদের নিয়ে কাজ করার অনেক গল্পই এই দেশে লেখা যাবে। কারণ এখানকার লেখকরা সবসময়ই সেরা ছিলেন। আসলে সমস্যাটা হবে নায়কদের। নায়িকার সঙ্গে মিল হওয়া নিয়ে ইগোতে চলে যাবে তারা। চরিত্রের গুরুত্ব কম বেশি ফিতা দিয়ে মাপবে। এমন করলে তো হবে না। স্যাক্রিফাইস করতে জানে না এখন কেউ।

একটা সময় সিনেমায় দুই নায়ক থাকলে আর তার একজন আপনি হলেই দর্শক ধরে নিতো আপনার করুণ পরিণতি হবে। হয় নায়িকাকে অন্য কারো হাতে তুলে দিয়ে মরে যাবেন নয়তো আড়ালে চলে যাবেন। দর্শক আপনাকে এই জায়গাটিতে অবধারিতই ধরে নিতো। এই বিষয়টা আপনি কীভাবে উপভোগ করতেন? কখনো খারাপ লাগতো না বারবার ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রের জন্য?

না। খুবই উপভোগ করতাম। কারণ, দর্শক এই চরিত্রটিতে আমাকেই সবচেয়ে সেরা ভাবতো। দর্শক চাইতো বলেই প্রেমে ব্যর্থ হতাম আমি। দর্শক চাইতো বলেই পরিচালকরাও আমার ওপরই আস্থা রাখতেন। এটা আমার জন্য অনেক স্বাচ্ছন্দ্যের ছিল। আমি সবসময়ই নিজের চরিত্রটিকে জীবন্ত করতে চাইতাম। হয়তো সেটা পারতাম। নইলে দর্শক এই চরিত্র-ছবিগুলোই মনে রেখেছেন কেন? আমি ক্যারিয়ারজুড়ে শতাধিক সিনেমা করেছি। তার মধ্যে স্যাক্রিফাইজের চরিত্র করেছি হয়তো ১৫-২০টার মতো। সব ছাপিয়ে এগুলোই সবাই বেশি মনে রেখেছে। আমাকে সবাই ট্র্যাজেডির নায়ক ভাবে। মজার ব্যাপার হলো এই বিশেষ গুণেই ‘পোড়ামন ২’ ছবিতে যুক্ত হওয়া।

মজার ব্যাপারটি বিস্তারিত জানতে চাই…

‘পোড়ামন ২’ ছবিতে যে চরিত্রে আমি কাজ করেছি সেটি ট্র্যাজেডির। আব্দুল আজিজ গল্পটি নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বলছিলেন যে ‘বাপ্পা ভাই, আপনাকে আমার এই ছবির চরিত্রে রাজি হতেই হবে। কারণ আপনি আমাদের হিরোদের মধ্যে ট্র্যাজেডি কিং ছিলেন। এই চরিত্রটিও অনেক কষ্টের, আপসের। আপনাকে ছাড়া বিকল্প কেউ নেই।’ আমি উনার বলার ধরনে আগ্রহী হয়ে গল্পটি পড়ে চরিত্রটি পছন্দ করে ফেললাম। ব্যাস…

আজকাল প্রচুর তারকার ছড়াছড়ি চারপাশে। নামের আগে নায়ক-নায়িকা অভাব নেই। কিন্তু কোথাও গেলে তাদের কেউ চিনছে না, জানছে না। তাদের দেখতে হলেও আসছে না দর্শক। কেন?

এই উত্তর দেয়ার আগে একটা মজার অভিজ্ঞতা বলি। সিয়াম এখানে আছে (পাশে বসা ‘পোড়ামন-২’ ছবির নায়ক সিয়ামকে ইশারা করে) ও নিজেও দেখেছে, এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। আমরা এর কাজ করেছিলাম মেহেরপুরে। সেখানে তখন পূজা চলছিল। আমাকে দেখতে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল চারপাশ। তার চেয়েও মজার ছিল এক নারী এলেন প্রসাদ নিয়ে তার প্রিয় নায়ক বাপ্পারাজকে খাওয়াবেন বলে। একবার ভাবুন, যে প্রসাদ দেবতাদের জন্য বরাদ্দ সেই প্রসাদ তিনি নিয়ে এসেছেন আমার জন্য। এটাই ভালোবাসা, এটাই আমি বাপ্পারাজের অর্জন আর এটাকেই তারকাখ্যাতি বলে। প্রায় ১০ বছর হলো আমি সিনেমায় নেই। আমাকে ভুলে যাবার কথা ছিলো সবার। কিন্তু তা হয়নি। কারণ, মানুষ আমার সম্পর্কে কিছু জানে না। একটা মোহ ছিল, সেটা এখনো রয়ে গেছে। তাই চোখের সামনে পেলে আবেগতাড়িত হয়। বারবার তাকায়। একটু কথা বলতে চায়। সুযোগ পেলে আপ্যায়ন করতে চায়। কিন্তু এখনকার যারা তারা তাদের ঘর, বাহির, বাথরুম, বেডরুম- সবই মুখস্ত সাধারণ মানুষের। তবে কেন তাকে নিয়ে আগ্রহ দেখাবে, মাতামাতি করবে।

এখনো দর্শক আপনাকে এতো ভালোবাসে। তবু চলচ্চিত্রে নিয়মিত হতে ইচ্ছে করে না?

না। ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে যাব। অন্য কিছুতে মনস্থির করতে হবে। কারণ, এখানে এখন আর সিনেমা করার সেই পরিবেশটা নেই, যা আমাদের সময় ছিলো। এই পরিবেশে ভাই আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিতে চাই চলচ্চিত্র থেকে।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ