সারাদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পৌর কাউন্সিলরসহ ৮ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটলেও মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে ২ মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। বন্দুকযুদ্ধের এসব ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
কক্সবাজার
কক্সবাজারের টেকনাফে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. একরামুল হক (৪৬) নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতে উপজেলার নোয়াখালীপাড়া এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
র্যাব-৭ জানিয়েছে, গভীর রাতে টেকনাফ থানাধীন নোয়াখালীপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে র্যাব-৭ এর একটি আভিযানিক দলের গুলি বিনিময় হয়। ঘটনাস্থলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবার শীর্ষ গডফাদার টেকনাফ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. একরামুল হকের গুলিবিদ্ধ দেহ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শ্যুটার গান, ছয় রাউন্ড গুলি ও পাঁচটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার গুলিয়াখালীতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মো. রায়হান (৩৮) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে সন্দ্বীপ ফেরি ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেল হক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সন্দ্বীপ ফেরি ঘাটে রায়হানকে ধরতে অভিযান চালানো হলে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে মাদক ব্যবসায়ী রায়হান নিহত হন। নিহত রায়হান তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ নিহত রায়হানের তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হালিম মন্ডল (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত দেড়টার দিকে শহরের হাউসিং ‘ডি’ ব্লক মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, মাদক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশে একদল মাদক ব্যবসায়ী ওই মাঠে অবস্থান করছে এমন সংবাদ পেয়ে মডেল থানা পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য কর গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে একজন গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এসময় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়।
ওসি আরও বলেন, পরে পুলিশ জানতে পারে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হালিম মন্ডল। তিনি পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। ঘটনাস্থল থেকে ১টি সাটার গান, ১টি পাইপ গান, ৩ রাউন্ড গুলি ও ৮শ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
মেহেরপুর
মেহেরপুরের গাংনীতে হাফিজুর রহমান হাফি (৪৮) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি দু’পক্ষের গোলাগুলিতে হাফিজুর রহমান হাফি নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও ১১২ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ। হাফিজুরের নামে গাংনী থানায় মাদকের দুই ডজনের বেশি মামলা রয়েছে।
গাংনী থানার ওসি হরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, শনিবার রাত আড়াইটার দিকে গাড়াবাড়য়ী গ্রামের বাথানপাড়া মাঠে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির খবর পায় পুলিশ। পুলিশের কয়েকটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে তাকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে হাসপাতলের স্থানীয় লোকজন তার পরিচয় নিশ্চিত করেন।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসায়ী হাসান ওরফে ইয়াবা হাসান নিহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি (অস্ত্র), সাত রাউন্ড গুলি ও ১২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বগাদিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সোনাইমুড়ী থানার ওসি নাসিম আহম্মেদ জানান, এলাকার চিহ্নিত ও কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হাসানকে গ্রেফতারে উপজেলার বগাদিয়া ইজতেমা মাঠে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তার লোকজন গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালালে হাসান গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অভিযানে তিন পুলিশ সদস্য আগত হয়েছেন। নিহত হাসানের বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে ২১টি মামলা এবং তিনটি অস্ত্র মামলা রয়েছে।
ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় দু’দল মাদক ব্যবসায়ীর গোলাগুলিতে রফিকুল ইসলাম লিটন (৩৬) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত একটার কিছু পর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে বড়দাহ জামতলা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র-গুলি, ফেনসডিলি ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
স্থানীয়রা জানান, রাত একটার পর হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পান তারা। এরপর বড়দাহ জামতলায় রাস্তার পাশে গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
চাঁদপুর
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত পৌনে ৩টার দিকে মতলব দক্ষিণ থানা ও ডিবি পুলিশের একটি যৌথ দল চাঁদপুর মতলব সড়কের হাজীর ডোন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ মাদক মামলার আসামি সেলিমকে গ্রেফতার করে। এ সময় সেলিমের সহযোগীরা পুলিশের উপর গুলি ও হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে সেলিম গুলিবিদ্ধ হলে তাকে মতলব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
মতলব দক্ষিণ থানার ওসি কুতুবউদ্দিন জানান, এ ঘটনায় ৪ পুলিশ আহত হয়েছেন। এছাড়া ৪ রাউন্ড গুলি, ৬ রাউন্ড কার্তুজ, ১১০ পিস ইয়াবা ও ২টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। শনিবার রাত দেড়টার দিকে নগরীর মরাখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কনস্টেবল হুমায়ুন ও কনস্টেবল আমির হামজা মারাত্মক আহত হন। তাদের স্থানীয় পুলিশলাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মো. আশিকুর রহমান জানান, এলাকায় কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী মাদক ভাগাভাগি করছে এমন সংবাদ পেয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়ে। পরে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয়ের মধ্যে গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকা তল্লাশি করে গুলিবিদ্ধ এক মাদক ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গ্রাম হেরোইন, চারটি গুলির খোসা, দুটি রামদা ও ১০০ ইয়াবা উদ্ধার করা হয় বলে জানান ওসি।