ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। হলের ছোট্ট কক্ষে গাদাগাদি করে কোনোরকমে দিন যাপন করেন শিক্ষার্থীরা। কেউ আবার শোবার জায়গাটুকুও না পেয়ে ঘুমান মসজিদের ফ্লোরে, রিডিং রুমের চেয়ারে এবং হলের ছাদে। এরকম চরম আবাসন সঙ্কটের মাঝেও কোনো কোনো হলে ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতারা রাজকীয় জীবন-যাপন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪ জন অথবা ২ জনের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে একাই থাকেন তাদের কেউ কেউ। কারো কারো কক্ষে রয়েছে খাট, ফ্রিজ, টিভিসহ অ্যাকুরিয়াম। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে এমন কয়েকটি কক্ষের সন্ধান পাওয়া গেছে।
হলের ৫১৫ নম্বর কক্ষে থাকেন ইমরান হোসেন ইমু। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সদস্য বলে পরিচয় দেন। তার কক্ষে রয়েছে ওয়ালটন কোম্পানির একটি ফ্রিজ। যদিও হলের কক্ষে ফ্রিজ রাখার বিষয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
হলের চতুর্থ তলার দক্ষিণ ব্লকের ৪০৮ নম্বর কক্ষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষপদ প্রত্যাশী এক নেতা থাকেন। এই নেতার কক্ষে একটি আধুনিক বক্স খাট রয়েছে। রয়েছে সনি টিভি। এছাড়া হলের শীর্ষ এক নেতার কক্ষে অ্যাকুরিয়ামও রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায়ই ছাত্রলীগকে ত্যাগী হওয়ার আহ্বান জানান। ১১মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাদেরকে ত্যাগী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘ত্যাগ করাটা শিখতে হবে, যেকোনো ব্যাপারে ত্যাগ না করলে কিন্তু অর্জন করা যায় না। অর্জন তখনই করতে পারবা যখন কিছু দিতে পারবা।’
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে দেখা যায় কর্মীরা কষ্টে জীবন-যাপন করলেও নেতারা আয়েশে দিন কাটান। এ নিয়ে কর্মীদের মনে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। ফ্রিজ রাখার বিষয়ে ইমরান হোসেন বলেন, ওটা ব্যবহার করা হয়না। বাসায় পাঠাবেন বলে কক্ষে রেখেছেন। তবে একজন ছাত্রলীগ নেতা জানান, তিনি আগে ওই ফ্রিজটি ব্যবহার করতেন। হল কর্তৃপক্ষ নিষেধ করার পর আর ব্যবহার করেন না।
এসব বিষয়ে রাকিব নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, অসংখ্য ছাত্রলীগ কর্মী ঘুমানোর জায়গাটুকুই পায় না। অথচ নেতারা সিঙ্গেল কক্ষে, টিভি, ফ্রিজ নিয়ে একক রাজত্বে বহুদিন ধরে থেকে আসছেন।
এ নিয়ে ছাত্রলীগের এক হল সভাপতি বলেন, নেতারা পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতি করে। তাদের সিঙ্গেল রুমের দরকার হয়। কিন্তু ওই নেতা আয়েশে জীবন-যাপনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।
এ বিষয়ে মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষক ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘একটি কক্ষে ফ্রিজ ছিল শুনে আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে যেয়ে আর পাইনি।’
সৌজন্যে- ইত্তেফাক