আত্মশুদ্ধি ও সংযম সাধনার বার্তা নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের কাছে ফিরে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস এই রমজান মাস। ইসলামী রীতি অনুযায়ী হিজরী সনের নবম মাস হলো মাহে রমজান। ইসলামের মূল স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। এর মধ্যে অন্যতম এই ‘মাহে রমজান’ তথা সিয়াম সাধনার মাস। এ মাসে রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনুল করীমে এরশাদ করেছেন, হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা ‘পরহেজগার’ হতে পার। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)
আর তাকওয়া কিংবা খোদাভীতি অর্জনই হচ্ছে রমজানের মূল শিক্ষা। রমজানের এই আধ্যাত্মিক শিক্ষার মূল্যও অপরিসীম। মূলত ‘মুত্তাকি’ বানানোই হচ্ছে রোজার কিংবা সিয়াম সাধনার আসল উদ্দেশ্য।
বিশ্ব মুসলিমের কাছে মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই রমজানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রতিটি মুসলিমের অফুরন্ত আবেগ ও নিখাদ শ্রদ্ধা। মাহে রমজানের কতখানি গুরুত্ব ও তাৎপর্য তা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদিসে বর্ণিত রয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সূতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার (রোজাদার) সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুইবার বলে, আমি সাওম পালন করছি, তথা আমি রোজাদার। ওই সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই রোজা পালনকারির মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট …।’ (বুখারী)
মূলত পবিত্র রমজান মাসের তাৎপর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এই রমজান মাসকে মহানবী (সা.) নিজেই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর বিশেষ রহমতে পরিপূর্ণ। ঝরনাধারার মতো আল্লাহর আশিসধারা রোজাদারদের অন্তররাজ্যে লোকদৃষ্টির অলক্ষ্যে বর্ষিত হতে থাকে। প্রথম ১০ দিন রহমতে পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফিরাতে পরিপূর্ণ এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নামের শাস্তি থেকে নাজাত ও মুক্তির জন্য নির্ধারিত।
এই রমজান মাসে আল্লাহ পাক এতো বেশি রহমত-বরকত নাজিল করেন যাতে বান্দাহর কৃতগুনাহ জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তার বান্দাহর জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন, জান্নাতের দরজা খুলে দেন, বন্ধ করে দেন জাহান্নামের সবদরজা। এমাসেই বড় বড় শয়তানকে আটকে রাখা হয়। এমাসে শুধু মুসলমানগণ নয়, সবসৃষ্টিই আল্লাহর খাস রহমত লাভ করে। এমাসেই মানবজাতির একমাত্র দিক নিদর্শন কুরআন করীম অবর্তীর্ণ করেন। এমাসে বান্দাহর জন্য এমন একটি রাত উপহার দিয়েছেন যা এবাদত- বন্দেগীর জন্য হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
রোজা –মূলত আল্লাহ এবং তার বান্দাহর মধ্যে মিলনসেতু রচনা করে বান্দাহকে মুত্তাকির সর্বোচ্চ আসনে আসীন করে। আর এটি রোজার আধ্যাত্মিক শিক্ষার মূল তাৎপর্য। এই শিক্ষা কাজে লাগাতে পারলে মুসলমানগণ নিশ্চয়ই ইহকালে কল্যাণ ও পরকালে মুক্তি লাভ করতে পারবেন।
মহা বরকত ও কল্যাণময় মাহে রমজানে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া-দরুদ পাঠ, তওবা-ইস্তেগফার ও প্রার্থনা পেশের মাধ্যমে রহমত কামনার জন্য উত্তম।
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মাহে রমজানের পূর্ণ একটি মাস রোজা পালন করে, ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকবেন; এমন ব্যক্তিরাই দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম। তারা আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করেন অসীম রহমত। প্রকৃত ও খাঁটি রোজাদাররা এতে অবগাহন করে ১১ মাসের পুঞ্জীভূত পাপ-পঙ্কিলতা ও কলুষ-কালিমা থেকে পরিশুদ্ধ ও পূতপবিত্র হয়ে যান। যারা প্রকৃত সতর্ক ও জ্ঞানী, তারা এ সুবর্ণ সুযোগের পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার করে থাকেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণ করতে পারে না এবং তিনি কিছু রূদ্ধ করতে চাইলে এরপর কেউ তার উন্মুক্তকারী নেই।’ (সূরা আল-ফাতির, আয়াত: ২)
আসুন, আমরা যারা মুমিন মুসলমান দাবিদার তারা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তুলি। আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে তার রহমতের দরজা অবারিত করে দিয়েছেন তা যেন একাগ্র এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে কাজে লাগাই।