মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতা-বিরোধী অপরাধ সংঘটন হয়েছে কি হয়নি – তার তদন্তের জন্য দি হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকদের অনুমতি চেয়েছেন আদালতেরই একজন আইনজীবী। মিয়ানমার আইসিসির সদস্য নয়, কিন্তু জানা গেছে ঐ আইনজীবী যুক্তি দিয়েছেন – সেদেশের অপরাধের কারণে সদস্য দেশ বাংলাদেশ তার শিকার হয়েছে, ফলে ঐ অপরাধ তদন্তের এখতিয়ার আইসিসির রয়েছে।
তদন্তের অনুমতি দেওয়ার আগে আইসিসির তিনজন বিচারকের চেম্বার থেকে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইসিসির চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে তিনটি বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের লিখিত বক্তব্য জানতে চেয়েছে আইসিসি।
এক, কোন পরিপ্রেক্ষিতে বিশাল সংখ্যায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে ঢুকলো ?
দুই, মিয়ানমার সদস্য দেশ না হলেও সেখানে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ তদন্তে আইসিসির এখতিয়ার নিয়ে বাংলাদেশের মতামত কী? এবং
তিন, অপরাধের অভিযোগ তদন্তের অনুমতি দেওয়ার জন্য আদালত বিবেচনা করতে পারে এমন যে কোনো বিষয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বিবিসিকে বলেছেন, তারা আইসিসির চিঠির জবাব দেবেন। জানা গেছে ১১ই মে’র ভেতর জবাব চাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিন বলছেন, রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে আইসিসির বিচারকরা অনুমতি দেবেন কি দেবেন না – তা অনেকটাই নির্ভর করবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বক্তব্যের ওপর।
তিনি বলেন, সদস্য নয় এমন একটি দেশে সংঘটিত মানবতা-বিরোধী অপরাধের শিকার হয়েছে একটি সদস্য দেশ, ফলে সেই অপরাধ তদন্তের এখতিয়ার তাদের রয়েছে – আইসিসির এই অবস্থান ব্যতিক্রমী। “এখন বাংলাদেশও নিজেকে সেই অপরাধের শিকার বলে মনে করে কিনা – সেটা এই তদন্তের অনুমতির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ…বাংলাদেশকে খুবই বড় ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।”
তিনি বলেন, “সদস্য হিসাবে বাংলাদেশকে এখন আন্তর্জাতিক আদালতের সাথে সহযোগিতা করতেই হবে।”
অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ?
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতা-বিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ তদন্তের উদ্যোগের কথা এমন দিনে জানা গেল, যেদিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ ধরনের তদন্তের জন্য আইসিসির কাছে আহ্বান জানিয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন পক্ষ থেকে এ ধরনের দাবি করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ চাইলেও আইসিসিতে বিচারের কথা এড়িয়ে চলেছে।
আহমেদ জিয়াউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশ সবসময় চেয়েছে চাপ দিয়ে, বুঝিয়ে যেন রোহিঙ্গাদের ফেরতা পাঠানো যায়। তাছাড়া চীন এবং ভারতের মতো আঞ্চলিক কয়েকটি দেশের মনোভাবও হয়তো বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিতে হয়…ফলে আমি মনে করি আইসিসির এই উদ্যোগ বাংলাদেশকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলবে।”
বিচারের সম্ভাবনা কতটা?
আহমেদ জিয়াউদ্দিন বলেন, অপরাধ তদন্তের অনুমতি দিলেও তা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। “আইসিসিতে এরকম অনেক তদন্ত হয়, যা শেষই হয়না, বছরের পর বছর গড়াতে থাকে।”
তবে একইসাথে তিনি বলেন, জবরদস্তি করে, নির্যাতন করে মানুষকে দেশ ছাড়া, ঘরবাড়ি ছাড়া করা আন্তর্জাতিক আইনে বড় ধরণের মানবতা-বিরোধী অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। “মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতনের অনেক তথ্য প্রমাণ অনেকের কাছেই রয়েছে, এমনকী আমেরিকার কাছেও রয়েছে।”