বিগত (২০১৬-১৭) অর্থবছরে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সমমর্যাদার ব্যক্তিদের জন্য ৩৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা দিয়ে ৫০টি গাড়ি ক্রয় করে সরকারি পরিবহন অধিদফতর। ১৬’শ সিসি টয়োটা হাইব্রিড ক্যামরি’র প্রতিটির গাড়ির মূল্য পড়ে ৭২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
পরিবহন পুলের দাবি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ শাখা বিভিন্ন প্রকার গাড়ির যে ক্রয়মূল্য সুনির্দিষ্ট করে দেয়, সরকারি সব সংস্থা বিকল্প চিন্তা না করে সেই দামে তা ক্রয় করে। কিন্তু তারা সেটি না করে সরকারের এক কোটি ছয় লাখ টাকা সাশ্রয় করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতিটি গাড়ির ক্রয়মূল্য ৭৫ লাখ টাকা ধার্য করে দেয়। কিন্তু অধিদফতর উন্মুক্ত দরপত্র ও তাদের ভাষায় ‘সফল আলাপ-আলোচনার’ মাধ্যমে প্রতিটি গাড়ি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে। এতে গাড়িপ্রতি দুই লাখ ১২ হাজার টাকা কম খরচ পড়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পরিবহন অধিদফতরের দেয়া একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
জাতীয় সংসদ ভবনে গত রোববার অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, এর আগে কমিটি অধিদফতরের গাড়ি কেনা সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ জানতে চেয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
কমিটি সূত্র জানায়, ব্যয় সাশ্রয় করে এসব গাড়ি আমদানির দাবি করলেও শর্ত অনুযায়ী কেনা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায় সংসদীয় কমিটি। কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, শুধু কম দামে গাড়ি কেনাই বড় কথা নয়, এ ব্যাপারে অনেকগুলো টেকনিক্যাল বিষয় জড়িত। তাই পরবর্তী বৈঠকে গাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপনের সুপারিশ করে কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিফুর রহমান বলেন, অধিদফতর দাবি করেছে, মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে গাড়ি আমদানি করে। কর্মের প্রতি সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধের এক অনুপম নিদর্শন স্থাপন করেছেন তারা। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো, অন্যান্য শর্ত মানা হয়েছে কিনা? তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ৩৩ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী, দুজন উপমন্ত্রী এবং মন্ত্রী পদমর্যাদার প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ উপদেষ্টা রয়েছেন। পদাধিকার বলে তারা সরকারি গাড়ি পেয়ে থাকেন। আর এমপিরা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা পেয়ে থাকেন।
সূত্র জানায়, মন্ত্রীরা সরকারি গাড়ি পেলেও এমপি হিসেবেও শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা পান। এ সুবিধায় চলমান দশম জাতীয় সংসদের প্রত্যেক এমপি এখন কোটি টাকা মূল্যের গাড়ির মালিক। তাদের অধিকাংশই জাপানের তৈরি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার, স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের প্রাডো টিএক্স ও ডিজেলচালিত ভিএক্স মডেলের গাড়ি।
দেশের বেশ কয়েকটি গাড়ি বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এসব মডেলের প্রতিটি গাড়ির দাম এ দেশে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি। এ ধরনের গাড়ি নিরুৎসাহিত করতে ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৮-১০ গুণ বেশি শুল্ক নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ৫০-৭০ লাখ টাকার এসব গাড়িতে তাই শুল্কই আসে সাড়ে ৪-৫ কোটি টাকা। পাশের দেশ ভারতের এমপিদের এ ধরনের শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধা দেয়া হয় না। তবে অধিবেশন চলাকালীন সময় তারা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহার আগে অবশ্যই এ বিষয়ে চিঠি দিতে হয় তাদের।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বিলাসবহুল গাড়ির আমদানি ঠেকাতে প্রথমে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রী-এমপিরা এতে আপত্তি করায় সর্বোচ্চ সাড়ে চার হাজার সিসির গাড়ি আনতে অনুমতি দেন তিনি। তবে এমন বিলাসী গাড়ি যতটা সম্ভব পরিহার করতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে আমদানি করা গাড়ি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৪০০০ সিসি বা তারও অধিক সিসির গাড়ির দিকেই ঝোঁক বেশি মন্ত্রী-এমপিদের।
জাগো নিউজ এর সৌজন্যে