দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সম্মেলনকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে উল্লেখ করে এর প্রশংসা করেছে পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়া বলছে, কোরীয় উপদ্বীপে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে দুই কোরিয়ার নেতার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে ‘নতুন যুগের সূচনার পথ’ তৈরি হয়েছে।
উত্তরের সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ দুই নেতার ‘পানমুনজম ঘোষণা’র বিস্তারিত তুলে ধরে বলেছে, ‘এ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় পুনর্মিলন, ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য পথ খুলে গেছে।’
ঘোষণায় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ও দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট মুন জ্যায়ে ইন পুরোমাত্রায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ তথা পারমাণবিক মুক্ত কোরীয় উপদ্বীপ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বোঝাপড়া তৈরির একক উদ্দেশ্যে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক আবরণ ও সামরিক উপস্থিতির অবসান দীর্ঘদিন ধরে দেখতে চায় উত্তর কোরিয়া। কিন্তু ১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়া দক্ষিণে হামলা চালায়। তবে এই প্রতিবেশি দুই রাষ্ট্রের মধ্যে শুধুমাত্র উত্তরের হাতেই রয়েছে পারমাণবিক মরণাস্ত্র।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দুই কোরিয়া একীভূত হতে উত্তর কোরিয়া অতীতে যে অঙ্গীকার করেছিল শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি।
কয়েক বছর ধরে পিয়ংইয়ং দাবি করে আসছে যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি থেকে কখনই পিছু ফিরে আসবে না। আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলা থেকে দেশ রক্ষায় তাদের এ কর্মসূচির প্রয়োজন আছে বলে দাবি পিয়ংইয়ংয়ের।
তবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য আলোচনা-মতবিনিময় অব্যাহত রাখার প্রস্তাব এসেছে দুই কোরিয়ার দুই রাষ্ট্রনেতার ঐতিহাসিক ওই বৈঠকে। যদিও কিম জং উন এখনো শুক্রবারের ওই বৈঠকের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ধরনের মন্তব্য করেননি।
পৃথক এক প্রতিবেদনে কেসিএনএ বলছে, কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে শুক্রবারের বৈঠকে দুই নেতা একেবারে খোলামেলা পরিবেশে আন্তরিকতার সঙ্গে মত-বিনিময় করেছেন।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপত্র দ্য রোডং সিনমুন পত্রিকাটি চয় পৃষ্ঠার। কিন্তু সরকারি এই দৈনিক ‘কিম জং উন ও মুন জ্যায়ে ইনে’র বৈঠকের সংবাদ প্রকাশ করেছে পুরো চারপৃষ্ঠা জুড়ে। আর এসব সংবাদে ছবি রয়েছে ৬০টি; এর মধ্যে প্রথম পৃষ্ঠাতেই ১৫টি।
এদিকে, দুই কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বৈঠকের কয়েক মিনিটের একটি ফুটেজ প্রকাশ করেছে উত্তরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল। এতে কিম ও মুনের আলিঙ্গন দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। সংবাদ উপস্থাপক রি চুন হি ওই বৈঠকের যোথ ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।
ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়া স্টাডিজের ইয়াং মু-জিন বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়া যে তার অঙ্গীকারের ব্যাপারে সতর্ক এই বৈঠকের মাধ্যমে সেই বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে পিয়ংইয়ং।’
তিনি বলেন, এটা অবশ্য উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্মেলনের ব্যাপারেও ওয়াশিংটনকে একটি বার্তা দিয়েছে। আর সেটি হচ্ছে, বল এখন ওয়াশিংটনের কোর্টে।
সূত্র : এএফপি।