যুক্তরাষ্ট্রের মাঝ-আকাশে একটি বিমানের ইঞ্জিন থেকে ছুটে আসা ধারালো টুকরার আঘাতে জানালা ভেঙে যাওয়ার পর সেটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হওয়ায় পাইলটের প্রশংসা করা হচ্ছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রেখে পাইলট ক্যাপ্টেন টেমি জো শাল্টস যেভাবে বিমানটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন ও নিরাপদে জরুরী অবতরণ করান তাতে যাত্রীরা তাকে ‘হিরো’ বলে উল্লেখ করছেন।
এই ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তকারীরা বলছেন, ইঞ্জিনের ফ্যানের ব্লেডে ত্রুটি ছিলো বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।
সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বিমানটি মঙ্গলবার ১৪৯ জন যাত্রী নিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে ডালাসে যাচ্ছিলো। উড্ডয়ন শুরু করার ২০ মিনিট পর বিমানের ইঞ্জিনে বিকট একটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়। তখন ইঞ্জিন থেকে একটি টুকরো ছিটকে এসে আঘাত করে বিমানের জানালায়। জানালাটি ভেঙে যাওয়ার পর বিমানের ভেতরে বাতাসের চাপ কমে যায় এবং বিমানের ভেতরে যাত্রীরা মুখে অক্সিজেনের মাস্ক পরে চিৎকার করতে শুরু করেন।
এক পর্যায়ে একজন মহিলা যাত্রী বাতাসের টানে ওই জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছিলেন। সেসময় অন্যান্য যাত্রীরা তাকে পেছন থেকে বিমানের ভেতরের দিকে টেনে ধরে রাখে। কিন্তু পরে জেনিফার রিওর্ডান নামে ৪৩ বছর বয়সী ওই যাত্রী মারা যান। এসময় আরো সাতজন যাত্রী সামান্য আহত হয়েছেন।
এই সময় বিমানটি হঠাৎ করে খুব দ্রুত নিচের দিকে নামতে শুরু করে। পাইলটকে তখন বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়।
পাইলট:”সাউথওয়েস্ট ১৩৮০, আমাদের এখন একটি ইঞ্জিন কাজ করছে।”
“বিমানের একটি অংশ নেই। ফলে আমাদেরকে বিমানের গতি শ্লথ করতে হচ্ছে। কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন।”
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ: “যাত্রীরা আহত হয়েছেন। ওকে। কিন্তু আপনার বিমানে কি আগুন লেগেছে?”
পাইলট: “না, আগুন লাগেনি। কিন্তু এর একটা অংশ মিসিং। বলা হচ্ছে, সেখানে একটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ একজন বাইরে চলে যাচ্ছেন।”
এরকম পরিস্থিতিতে বিমানের পাইলট তার নার্ভকে অত্যন্ত শক্ত রাখেন এবং জরুরী ভিত্তিতে ফিলাডেলফিয়া এয়ারপোর্টে জরুরী ভিত্তিতে বিমানটিকে অবতরণ করান।
এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সব জেট বিমানের ইঞ্জিন পরীক্ষা করে দেখার আদেশ দিতে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, CFM56-7B এই ইঞ্জিনটি বিশ্বজুড়ে আট হাজারেরও বেশি বোয়িং ৭৩৭ বিমানে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর আরো যেসব এয়ারলাইন্সের বিমানে এই ইঞ্জিনটি আছে- ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, আমেরিকান এয়ারলাইন্স এবং ডেল্টা এয়ারলাইন্স- তারা বলছে যে তারাও এসব পরীক্ষা করে দেখার কাজ শুরু করেছেন।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে ইঞ্জিনে ফ্যানের একটি ব্লেড ভেঙে গেছে। ইঞ্জিনের কোন অংশ যাতে বেরিয়ে আসতে না পারে সেজন্যে এটি ঢাকনা থাকলেও সেখান থেকে লোহার একটি টুকরো বাইরে চলে আসে এবং সেটি উড়ে আঘাত করে বিমানের একটি জানালায়।