ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মোর্শেদার রগ কেটে দেওয়ার অভিযোগ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহানের। আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের সভায় ইফফাতের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী। একই সঙ্গে ২৬ ছাত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ বা কমিটিতে কারা ছিলেন, সে বিষয়ে মুখ খোলেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ। হল প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে কোনো প্রমাণ পায়নি। ফলে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে।
হলের একাধিক ছাত্রীর অভিযোগ, শুধু মোর্শেদার পা কাটার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বহিষ্কার প্রত্যাহার করা ঠিক হচ্ছে না। তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্রীদের কক্ষে আটকে নির্যাতন করার অভিযোগ ছিল। ওই কক্ষে কীভাবে ছাত্রীদের কীভাবে নির্যাতন করা হচ্ছিল, তার অডিও রেকর্ড অনলাইনে আছে। ওই কক্ষেই একজন গোপনে এটি ধারণ করেন। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই হলের ছাত্রীরা ইফফাতের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেগুলো বিবেচনায় আনা হচ্ছে না।
১০ এপ্রিল মধ্যরাতে ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগে ইফফাতকে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় তিন ছাত্রীকে কক্ষে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ ছিল ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে। গভীর রাতে ছাত্রীরা তাঁকে কক্ষে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
১১ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রক্টর ও হল প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে তিনি নিশ্চিত হন যে ইফফাত জাহান এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত, মারধর ও জখম করেছেন। এরপরই তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
হলের ছাত্রীদের অভিযোগ, প্রায়ই ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন চালাতেন ইফফাত। তবে এত দিন ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। প্রশাসন তাঁদের আবাসনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না করায় তাঁরা হলের নেত্রীদের মাধ্যমে ওঠে, তাঁদের কথামতো চলতে বাধ্য হন। সবশেষ ৮ এপ্রিলের আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ছাত্রীরা রাতে হল থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। ওই দিন ও পরের দিন সোমবার (৯ এপ্রিল) আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় মঙ্গলবার রাতে বেশ কয়েকজনকে কক্ষে ডেকে চড়-থাপ্পড় দেন ইফফাত। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী মোর্শেদা খানম জানালার কাচে লাথি দিয়ে পা কেটে ফেলেন। কেটে যাওয়া পায়ের ছবি অনেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে মোর্শেদার রগ কেটে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। অন্য ছাত্রীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ইফফাতকে মারধর করে আটকে রাখেন। হলের ভেতরে ছাত্রীরা ও বাইরে কয়েক হাজার ছাত্র প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভের মুখে প্রথমে হল থেকে, পরে ছাত্রলীগ থেকে এবং সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইফফাতকে বহিষ্কার করা হয়। পরদিন তদন্ত কমিটি করে ছাত্রলীগ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়। পরে ২৪ নেতা-কর্মীকে পাল্টা বহিষ্কার করে তারা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাৎক্ষণিক ছাত্রলীগ নেত্রীর বহিষ্কারকে সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের সভায়ও ২৬ ছাত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এটি সভায় আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়টিও তদন্ত কমিটি দেখবে। তবে কারা তদন্ত করেছে, সে বিষয়টি তিনি হলের প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে জেনে নিতে বলেন।
সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান ১২ এপ্রিল হল ছাত্রীদের নিয়ে একটি সভা করেন। সেখানে ছাত্রীরা ইফফাতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করেন। তাঁরা দীর্ঘদিন চলে আসা রাজনৈতিক কক্ষ ও অরাজনৈতিক কক্ষের প্রথা ভাঙার দাবি করেন। গণরুমের ছাত্রীদের জোর করে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ করেন। ১০ এপ্রিল রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় বেশ কয়েকজনকে কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়। এর আগে ইফফাত এ ধরনের নির্যাতন করেছেন বলেও সভায় অভিযোগ ওঠে। এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটিতে কিছু আছে কি না, কিংবা ওই ২৬ ছাত্রীর পরিচয় প্রকাশ করা হবে কি না, এ সম্পর্কেও প্রশাসনের কেউ কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনায় হল প্রশাসন থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। ভিক্টিম তাঁর বক্তব্য দিয়েছে। তাঁদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সবকিছু স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়েছে।’ কারা কারা কমিটিতে ছিলেন, এ প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি।