Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মোহাম্মদ আল আজিম

chardike-ad

মুছে যাক সব গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ বাঙালি সংস্কৃতির ও গর্বিত ঐতিহ্যের রূপময় ছটায় বৈশাখকে এভাবেই আবাহন করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পুরনো বছরের সব গ্লানি, সব অপ্রাপ্তি, বেদনা ভুলে নব আনন্দে জাগ্রত হবে পুরো জাতি। পহেলা বৈশাখ। বাঙালির জীবনে আজ এক নতুন দিন, নতুন বারতা। একটি নতুন বছরের শুভ সূচনা। শুভ নববর্ষ। স্বাগত ১৪২৫।

বাংলাদেশ এবং সারাবিশ্বে বাংলাদেশীরা গতকাল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছে। আজ রবিবার সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় উৎযাপন করা হয় পহেলা বৈশাখ। বাঙালি চেতনার ধারক মঙ্গল শোভাযাত্রা, গান, নাচ, বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসী বাংলাদেশীরা। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে প্রবাসী বাংলাদেশী নববর্ষ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে ১৪২৫’কে স্বাগত জানায় কোরিয়া বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীরা।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে, কোরিয়ায় বসবাসরত প্রবাসীরা নতুন সাজে বর্ণিল রঙে রাঙিয়েছে আজ, প্রাণে প্রাণ মিলে মেতে উঠেছে বৈশাখী উল্লাসে এই দূরদেশেও।

বাঙালির পহেলা বৈশাখ পালনের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এটি সারা দেশে ছড়িয়ে গেলেও এই উৎসব মূলত এসেছে গ্রামবাংলার মাটির কোল থেকে।গ্রামবাংলায় পহেলা বৈশাখে এখন নানা আয়োজন হয়ে থাকে, বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ বাঙালির এই উৎসব’কে বিশ্বের সকল প্রান্তের বাংলাদেশি প্রবাসী এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় এবং ভুলে যায় অতীতের সব গ্লানি। বিশ্বের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তির দেশ দক্ষিণ কোরিয়াতে’ও গ্রামবাংলার চেয়ে কোন অংশেই তার কমতি ছিলো না নববর্ষ উদযাপন।


বৈশাখী আয়োজনে আছে কাছে আসার গল্প , কাছে টানার নিখাদ বাঙালিয়ানা৷ আছে এক অনাবিল আনন্দে অবগাহনের আহ্বান। দক্ষিণ কোরিয়ায় আজ ভোরে ঐতিহ্যবাহি মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন দক্ষিণ কোরিয়াস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। শোভাযাত্রাটি কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বের হয়ে ইথেওয়ন, নোকসাপিয়ং এর এক প্রান্ত থেকে বেশ কয়েকটি স্থান প্রদক্ষিণ করে পরে সংযোগস্থলে গিয়ে থামে।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নাচ-গান, কবিতা আবৃতি, সহ অনুষ্ঠানে মঞ্চে অংশগ্রহণ করেন দেশী গায়ক ও নৃত্যশিল্পীরা।

নববর্ষের উৎসবে আনন্দ ভাগাভাগিতে বাঙালিদের পাশাপাশি মেতে উঠেছেন অনেক বিদেশীরাও। বাঙালির প্রাণের এই উৎসবে মিলেমিশে একাকার হয়েছেন তারাও। শুভ নববর্ষ বলে বাঙালিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন তারা। বাঙালির এই প্রাণের উৎসবে সিউলের রাজপথে নেমে এসেছেন এসব বিদেশিদের অনেককে দেখা গেছে বাঙালির সাজে। অনেক বিদেশি নারী পড়েছেন শাড়ি। ছিল হাতভর্তি কাচের চুড়ি। ছেলেদের দেখা গেছে পাঞ্জাবি পরা। আবার অনেকেই বিদেশী বাঙালি ছেলে মেয়েদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। উৎসবে অংশ নিয়ে তারা বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।

বাঙালি সংস্কৃতির এই পহেলা বৈশাখ আনন্দময় করে তোলে এবং প্রবাসীদের ব্যস্ততম জীবনকে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করার জন্য প্রবাসী বাঙ্গালীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়। এসময় বাংলাদেশী প্রবাসী আজিজুল হক বিপ্লব তার পহেলা বৈশাখের অনুভূতি জানান। তিনি বলেন বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠান করে থাকে। সেখানে আমরা কোরিয়ার সকল বাঙালি একত্রিত হয়ে পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ উপভোগ করি, নতুন বছরকে স্বাগত জানাই, মনে হয় এযেন একটা মিনি বাংলাদেশ।

কোরিয়া প্রবাসী রাসেল আহমেদ বলেন, আজ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উপলক্ষে কোরিয়ার প্রাণকেন্দ্র ইথেওয়ন, নোকসাপিয়ং এসেছি। লাল সাদা নীল সবুজ বাংলাদেশের সাজে বৈশাখী মেলা দেখে খুব ভালো লাগছে, মন সত্যি ভরে গিয়েছে। প্রকৃতির আদ্র আবহাওয়া উপেক্ষা করেও শত শত বাঙালিরা বৈশাখী উৎসব উপভোগ করছে। কোরিয়ার বুকে একটি ছোট্ট বাংলাদেশ গড়েছি আমরা। সাথে ভিনদেশে পান্তা, ইলিশ, বিভিন্ন প্রকার ভর্তা, পিঠা, সিংগাডা চটপুটি, ফুসকা খেয়েছি। অনুষ্ঠানটিকে প্রানবন্ত করে দর্শকদের মাঝে উপস্থাপনা করেন কবি বুলবুল আহমেদ।

সেই সাথে ছিলো বাংলাদেশী হালাল খাদ্য ব্যবসায়ীরা বাঙ্গালী রসনা বিলাস খাবারের স্টল বসায়। স্টলে মূল খাবারের আকর্ষন ছিল পান্তা ভাত-ইলিশ মাছ। অন্যান্য স্টল গুলোতে ছিল পেয়াজু, সিঙ্গারা, চমুচা, ঝালমুড়ী সহ রকমারী খাবারের সমাহার। প্রবাসী বাংলাদেশীরা বৃষ্টিতে ভিজেও বাঙ্গালী সংস্কৃতির এই সব অনুষ্ঠান আয়োজনে যাদের সহযোগীতা ছিল তাদের সকলকে ধন্যবাদ ও ভূয়সী প্রসংশা করেন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।

মোহাম্মদ আল আজিম, দক্ষিণ কোরিয়া।