বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্প্রতি ভাইবারের একটি ক্লোজড গ্রুপে নিজেদের নিয়ে কথাবার্তার সূত্র ধরে বিব্রত হয়েছে। ফলে সংস্থাটির ৭ ক্রুকে আকাশে উড়ার দায়িত্ব থেকে ‘গ্রাউন্ডেড’ করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিমানের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে বেশ কয়েকজন ক্রু দীর্ঘদিন ধরে বসে আছেন। তারা কোনো ফ্লাইট পরিচালনায় অংশ নিচ্ছেন না। তাদের মধ্যে ৩ জন গত এক বছর ধরে অফিসে বসে কাজ করছেন। ক্রুদের পূর্ণ সুবিধা ভোগ করলেও তারা আকাশের দায়িত্ব পালন করছেন না।
বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের মার্চের শেষ সপ্তাহে ভাইবারে বিমানের ক্রুদের ‘প্র্যাকটিসিং ডেমোক্রেসি’ নামে একটি গ্রুপে কথোপকথন শুরু হয়। গ্রুপে মোট ৬১ জন সদস্য যারা সবাই বিমানের ফ্লাইট সার্ভিসে নিয়োজিত। ভাইবার গ্রুপে একজন ক্রু প্রশ্ন তোলেন, ‘বিমানের ক্রু কম, অফিসে এত ক্রু বসে কেন?’ এ ম্যাসেজের পর বিমানের কয়েকজন ক্রু ভাইবারে নিজেদের আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
পরে বিষয়টি বাইরে জানাজানি হলে ৭ জন ক্রুকে ‘নেগেটিভ কনভার্সেশন’ এর কারণ উল্লেখ করে সতর্ক করে চিঠি দেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। এমনকি তদন্ত কমিটি করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আভাসও দেয়া হয়।
গত ২৭ মার্চ বিমানের ক্রুদের দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বিমানের ক্রুরা ‘সোশ্যাল অ্যাক্ট’ ভঙ করেছে। এতে বিমানের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ বিমানের একজন ক্রু বলেন, ‘ক্রুদের দায়িত্ব ফ্লাইটে, তাদের দায়িত্ব অফিস চালানো নয়। অথচ তারা অফিসে বসে ক্রুদের সমপরিমাণ বেতন ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। এ বিষয়ে লেখা হয়েছিল। গ্রুপে এমন কিছু লেখা হয়নি যাতে বিমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি তদন্ত কমিটি করে দুই দফা ক্রুদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দ্রুত তদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় বিমান কর্তৃপক্ষ ক্রুদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে বিমানকর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে। আমরা চাইলেই ফেসবুক টুইটারে নিজের ইচ্ছা মতো ছবি ও লিখতে পারছি না।’
এদিকে বিমানের অদৃশ্যমান চাপে ক্রুদের ব্যবহৃত তিন বছর আগে খোলা ‘প্র্যাকটিসিং ডেমোক্রেসি’ ভাইবার গ্রুপটি মুছে ফেলা হয়েছে। ক্রুরা বলছেন, বিষয়টি ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ ও সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের গড়ার অন্তরায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর কড়া নজরদারির বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও ডাক টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, কারো বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করার অধিকার কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নেই। এটা প্রতিটি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমরা সর্বস্তরের মানুষদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচরণে উদ্ধুদ্ধ করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি মনে করে, কেউ মুক্তিযুদ্ধ কিংবা দেশের জন্য অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। এসব সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে সরকারের আলাদা একটি বিশেষায়িত বিভাগ রয়েছে। তারাই অভিযোগটি দেখবে। কোনো কারণেই ওই বিশেষায়িত বিভাগ ছাড়া আবেগ বা অতি উৎসাহী হয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কাউকে শাস্তি দেয়ার অধিকার রাখে না। ব্যত্যয় ঘটলে উল্টো ফেঁসেও যেতে পারেন অতি উৎসাহীরা।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাহক সেবা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আতিক সোবাহানকে ফোন দেয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি, অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে এ বিষয়ে বিমানের পরিচালক প্রশাসন মো. মোমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানাতে কয়েকজন ক্রু আমার দফতরে এসেছিলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ